মেথিমাজল

নির্দেশনা

মেথিমাজল নিম্নোক্ত উপসর্গে নির্দেশিতঃ
  • যেসব রোগীদের গ্রেভস ডিজিস এর সাথে হাইপারথাইয়েডিজম অথবা বিষাক্ত মাল্টিনডুলার গলগন্ড রয়েছে, যাদের জন্য শল্যচিকিৎসা অথবা তেজস্ক্রিয় আয়োডিন চিকিৎসা উপযুক্ত নয়।
  • রোগীদের হাইপারথাইরয়েডিজম এর উপসর্গ সমূহ উপশমের জন্য যারা থাইরয়েড গ্রন্থির অপসারণ বা তেজস্ক্রিয় আয়োডিন চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন।

ফার্মাকোলজি

মেথিমাজল থাইরয়েড হরমোনের সংশ্লেষণে বাধা দেয় এবং তাই এটি হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় নির্দেশিত। এটি থাইরয়েডে সংরক্ষিত অথবা রক্তে পরিভ্রমণকারী থাইরক্সিন ও ট্রাইআয়োডোথাইরোনিনকে নিষ্ক্রিয় করে না এবং এটি মুখে অথবা ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগকৃত থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতায়ও হস্থক্ষেপ করে না। মেথিমাজল অস্ত্রে শোষিত হয়, যকৃতে এর বিপাক ঘটে এবং মূত্রের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়।

মাত্রা ও সেবনবিধি

মেথিমাজল মুখে সেব্য। দৈনিক মোট সেবনের মাত্রা ৮ ঘন্টা অন্তর তিন ভাগে সেবন করতে হয়।

প্রাপ্তবয়স্কদের: মৃদু হাইপারথাইরয়েডিজম এর ক্ষেত্রে দৈনিক প্রারম্ভিক সেবন মাত্রা হল ১৫ মিলিগ্রাম, প্রায় তীব্র হাইপারথাইরয়েডিজম এর ক্ষেত্রে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ মিলিগ্রাম, তীব্র হাইপারথাইরয়েডিজম এর ক্ষেত্রে দৈনিক ৬০ মিলিগ্রাম, তিনটি বিভক্ত মাত্রায় ৮ ঘন্টা অন্তর সেব্য। মেইন্টেনেন্স ডোজ এর মাত্রা হল দৈনিক ৫ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম।

শিশুদের: দৈনিক প্রারম্ভিক সেবন মাত্রা হল ০.৪ মিলিগ্রাম/কেজি শরীরের ওজন অনুযায়ী, যা তিনটি বিভক্ত মাত্রায় ৮ ঘন্টা অন্তর সেব্য। মেইন্টেনেন্স ডোজ এর মাত্রা হল প্রারম্ভিক সেবন মাত্রার অর্ধেক।

শিশু ও কিশোর রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার: যেহেতু প্রোপাইলথায়োইউরাসিল দিয়ে চিকিৎসার ফলে শিশুদের মধ্যে যকৃতে তীব্র ক্ষতির প্রতিবেদন পাওয়া গিয়েছে, তাই শিশুদের কোনও এন্টিথাইরয়েড ওষুধ এর প্রয়োজন হলে মেথিমাজলই হবে উপযুক্ত পছন্দ।

ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া

ওষুধের সাথে: এন্টিকোয়াগুলেন্ট (মুখে সেব্য)- যেহেতু মেথিমাজল ভিটামিন-K এর কার্যকারিতায় বাধা দেয়, তাই মুখে সেব্য এন্টিকোয়াগুলেন্ট (যেমনঃ ওয়ারফারিন) এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেতে পারে; PT/INR এর অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে, বিশেষকরে শল্যচিকিৎসার পূর্বে। বিটা-অ্যাড্রেনারজিক ব্লকিং উপাদান- হাইপারথাইয়েডিজমের ফলে বিটা ব্লকার গুলোর নিষ্কাশন আনুপাতিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। হাইপারথাইরয়েড রোগী যখন ইউথাইরয়েড হয়ে যাবে তখন বিটা ব্লকার এর মাত্রা কমাতে হবে। ডিজিটালিস গ্লাইকোসাইডস-হাইপারথাইরয়েড রোগী যখন একটি স্থির ডিজিটালিস গ্লাইকোসাইডস সেবনরত অবস্থায় ইউথাইরয়েড হয়ে যাবে তখন রক্তে ডিজিটালিস এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, তাই ডিজিটালিস গ্লাইকোসাইডস এর মাত্রা কমাতে হতে পারে। থিওফাইলিন-হাইপারথাইরয়েড রোগী যখন একটি স্থির থিওফাইলিন সেবনরত অবস্থায় ইউথাইরয়েড হয়ে যাবে তখন থিওফাইলিন এর নিষ্কাশন কমে যেতে পারে, তাই থিওফাইলিন এর মাত্রা কমাতে হতে পারে।

খাবারের সাথে: সর্বদা খাবারের সাথে নিয়ম করে একই সময় সেবন করতে হবে, খাবার বিনা পূর্বাভাসেই ওষুধের শোষণ প্রভাবিত করতে পারে।

প্রতিনির্দেশনা

মেথিমাজল বা এর যে কোন উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীলতার ক্ষেত্রে এটি প্রতিনির্দেশিত।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

সাধারণ: ত্বকে ফুসকুড়ি, ছুলি, বমি বমি ভাব, বমি, পাকস্থলীর পীড়া, অস্থি সন্ধিতে ব্যথা, প্যারেস্থেসিয়া, স্বাদ হ্রাস, অস্বাভাবিক চুলপড়া, পেশির ব্যথা, মাথা ব্যথা, চুলকান, তন্দ্রা ভাব, স্নায়ু প্রদাহ, ফুলা, ঘুর্ণিরোগ, ত্বকের রঙ্গকতা, জন্ডিস, লালা গ্রন্থির প্রদাহ, এবং লসিকা গ্রথির প্রদাহ।

বিরল: অ্যাগ্রেনুলোসাইটোসিস, গ্রেনুলোসাইটোপেনিয়া, থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া এবং অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানেমিয়া, ওষুধজনিত জ্বর, লুপাস সদৃশ উপসর্গ, ইনসুলিন অটোইমিউন উপসর্গ (যার কারণে হাইপোগ্লাইসেমিক কমা হতে পারে), যকৃতে প্রদাহ (ওষুধ বন্ধ করার কয়েক সপ্তাহ পর জন্ডিস থাকতে পারে), রক্তনালীর প্রদাহ এবং হাইপোপ্রোথ্রোম্বিনেমিয়া। বৃক্কে প্রদাহ খুব বিরল।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে

প্রেগনেন্সি ক্যাটাগরি D. যেহেতু মেথিমাজল ব্যবহারে কিছু বিরল জন্মগত বিকালঙ্গতা দেখা গিয়েছে, তাই গর্ভবতী নারীদের হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় অন্য উপাদান ব্যবহার করাই শ্রেয়, বিশেষকরে গর্ভাবস্থার প্রথম ট্রাইমেস্টারে। মেথিমাজল মাতৃদুগ্ধে নিঃসৃত হয়। যদিও বিভিন্ন গবেষণায় মেথিমাজল এর ব্যবহারে দুগ্ধসেব্য নবজাতকের উপর কোনও ক্লিনিক্যাল প্রভাব পাওয়া যায়নি, বিশেষকরে যদি থাইরয়েড এর কার্যকারিতা নিয়মিত (সাপ্তাহিক বা দ্বিসাপ্তাহিক) পর্যবেক্ষণ করা হয়।

সতর্কতা

জন্মগত বিকালঙ্গতা: মেথিমাজল প্লাসেন্টার ঝিল্লি অতিক্রম করে ভ্রুণের ক্ষতি করতে পারে, বিশেষকরে যখন গর্ভাবস্থার প্রথম ট্রাইমেস্টারে সেবন করা হয়। মেথিমাজল গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা হলে অথবা রোগী মেথিমাজল সেবনকালে গর্ভধারণ করলে, রোগীকে ভ্রূণের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে অভিহিত করতে হবে। যেহেতু মেথিমাজল দিয়ে চিকিৎসার সময় রোগীদের সন্তানদের মাঝে কিছু জন্মগত বিকালঙ্গতা দেখা গিয়েছে, তাই গর্ভবতী নারীদের হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় অন্য উপাদান ব্যাবহার করাই শ্রেয়, বিশেষকরে গর্ভাবস্থার প্রথম ট্রাইমেস্টারে। যদি মেথিমাজল ব্যবহার করা হয়, তবে রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বনিম্ন মাত্রা দিতে হবে।

অ্যাগ্রেনুলোসাইটোসিস: অ্যাগ্রেনুলোসাইটোসিস মেথিমাজল থেরাপির একটি জীবন নাশকারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া। রোগীদের নির্দেশ দিতে হবে যদি অ্যাগ্রেনুলোসাইটোসিস এর কোনও উপসর্গ যেমন- জ্বর বা গলা ব্যথা দেখা দিলে তারা যেন দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। লিউকোপেনিয়া, থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া এবং অ্যাপ্লস্টিক অ্যানেমিয়া (প্যানসাইটোপেনিয়া) দেখা দিতে পারে। অ্যাগ্রেনুলোসাইটোসিস, থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া এবং অ্যানেমিয়া (প্যানসাইটোপেনিয়া) এঅ্যানসিএ-পজেটিভ ভাস্কুলাইটিস হেপাটাইটিস অথবা এক্সফলিএটিভ ডার্মাটাইটিস দেখা দিলে ওষুধ সেবন বন্ধ করতে হবে এবং রোগীর অস্থিমজ্জার সূচক পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

যকৃতে বিষক্রিয়া: যদিও মেথিমাজল ব্যাবহারে যকৃতে প্রদাহের ধারণা পাওয়া গিয়েছে, তারপরও প্রোপাইলথায়োইউরাসিল এর চেয়ে মেথিমাজলে যকৃত প্রদাহের ঝুঁকি কম, বিশেষকরে শিশুদের ক্ষেত্রে। যকৃতে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে এবং হেপাটিক ট্রান্সঅ্যামাইনেস এর পরিমাণ তার সর্বোচ্চ সীমার ৩ গুণেরও বেশি হলে দ্রত ওষুধ সেবন বন্ধ করতে হবে।

হাইপোথাইরয়েডিজম: মেথিমাজল সেবনে হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা দিতে পারে তাই নিয়মিতভাবে টিএসএইচ ও মুক্ত T4 পর্যবেক্ষণ করে মাত্রা সমন্বয় করতে হবে যাতে একটি ইউথাইরয়েড অবস্থা বজায় থাকে। যেহেতু ওষুধটি প্লাসেন্টার ঝিল্লি অতিক্রম করতে পারে, তাই গর্ভবতী নারীদের যখন মেথিমাজল সেবন করানো হয়, তখন তা ভ্রুণের গলগন্ড বা বামনত্ব ঘটতে পারে। এই কারণে গর্ভাবস্থায় একটি পর্যাপ্ত কিন্তু অনধিক মাত্রা প্রয়োগ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মেথিমাজল হাইপোপ্রোথ্রোম্বিনেমিয়া এবং রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে, তাই মেথিমাজল দিয়ে চিকিৎসাকালীন সময়ে থাইরয়েড এর কার্যকারিতা পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা করতে হবে। যখন হাইপোথাইরয়েডিজম এর উপসর্গ সমূহের সমাধান ক্লিনিক্যালভাবে নির্ণীত হবে এবং রক্তের টিএসএইচ মাত্রা বাড়তে থাকবে, তখন মেইন্টেনেন্স ডোজ এর নিম্নতর মাত্রা প্রয়োগ করতে হবে।

মাত্রাধিক্যতা

উপসর্গ সমূহ হতে পারে-বমি বমি ভাব, বমি, পাকস্থলীর পীড়া, মাথাব্যথা, জ্বর, অস্থি সন্ধিতে ব্যথা, চুলকানি এবং ফুলে যাওয়া। দিনে বা কয়েক ঘন্টার মধ্যে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানেমিয়া বা অ্যাগ্রেনুলোসাইটোসিস দেখা দিতে পারে। যকৃতে প্রদাহ, বৃক্কের উপসর্গ, এক্সফলিএটিভ ডার্মাটাইটিস, স্নায়ুরোগ এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উদ্দীপনা বা বিষন্নতা খুব কম দেখা যায়। অত্যধিক মাত্রার ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

থেরাপিউটিক ক্লাস

Anti-thyroid drugs

সংরক্ষণ

আলো থেকে দূরে, শুষ্ক ও ঠাণ্ডা (৩০°সেঃ তাপমাত্রার মধ্যে) স্থানে রাখুন। সকল ওষুধ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।