নির্দেশনা

হাঁটু, কোমর, মেরুদন্ড, হাত ও অন্যান্য স্থানে বাতের চিকিৎসায় খাদ্য সম্পূরক হিসেবে এটি ব্যবহার হয়। এটি রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, খেলাধুলায় আঘাতপ্রাপ্ত, মাইগ্রেন, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় (যেমন, সোরিয়াসিস), রক্তনালীকার জটিলতায় (যেমন, অ্যাথারোস্কেলেরোসিস), কিডনীর পাথর এবং ইনফ্লাম্যাটরি বাউল ডিজিজ (যেমন, আলসারেটিভ কোলাইটিস, লিকি গাট সিনড্রোম)- এ উপকারী।

ফার্মাকোলজি

গ্লুকোসামিন (২-এমাইনো-২-ডিঅক্সি-আলফা-ডি-গ্লুকোজ) একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা শরীরে তৈরী হয়। এটি বিভিন্ন খাদ্যে পাওয়া যায়। ইহা গ্লাইকোসামিনোগ্লাইক্যান যেমন হায়ালুরনিক এসিড, কেরাটান সালফেট এবং কনড্রয়টিন সালফেট তৈরীর মূল উপাদান। গ্লাইকোসামিনোগ্লাইক্যান প্রোটিনের সাথে যুক্ত হয়ে প্রোটিওগ্লাইক্যানস তৈরী করে, যা অস্থিঃসন্ধির তরুনাস্থির মূল উপাদান। যখন তরুণাস্থি ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিংবা পরিমাণ মত তৈরী হয় না, তখন অষ্টিওআরথ্রাইটিস দেখা দেয়। গ্লুকোসামিন লিগামেন্ট, টেন্ডন ও নখ এবং অন্যান্য সংযোজন কলা তৈরীতে সাহায্য করে। যখন আমরা কৃত্রিমভাবে প্রস্তুতকৃত গ্লুকোসামিন সালফেট গ্রহণ করি, ইহা শরীরে গ্লুকোসামিনের পরিমান বাড়িয়ে দেয়, যা ক্ষতিগ্রস্থ তরুণাস্থির পুনর্গঠন করে। গ্লুকোসামিন তরুণাস্থির কোষ কনড্রোসাইট-কে গ্লাইকোসামিনোগ্লাইক্যান এবং প্রোটিওগ্লাইক্যান তৈরীতে সাহায্য করে।

কনড্রয়টিন সালফেট একটি গ্লুকোসামিনোগ্লাইক্যান (এসিড মিউকো-পলিস্যাকারাইড), যা সংযোজক কলা বিশেষ করে অস্থিঃসন্ধির তরুনাস্থিতে পাওয়া যায় (স্তন্যপায়ী প্রাণীদের)। কনড্রয়টিন সালফেট গ্লুকোসামিন সালফেটের মতই প্রোটিওগ্লাইকেনের মূল উপাদান যোগান দেয়। আবার কনড্রয়টিন এম.এম.পি. (ম্যট্রিক্স মেটালোপ্রোটিন্যাজ) এনজাইমকে বাধা দিয়ে শরীরের সুস্থ তরুণাস্থির ক্ষয় রোধ করে।

গ্লুকোসামিন এবং কনড্রয়টিন সালফেট একসাথে গ্রহণ করলে এদের কার্যকারীতা বৃদ্ধি পায়। প্রাপ্ত তথ্যাদি প্রমাণ করে যে, এই মিলিত ওষুধটি জটিল ধরণের অস্টিওআরথ্রাইটিস এর লক্ষণ ও উপসর্গ উভয়ই নিরাময় করতে এবং রোগের ক্রমবর্ধিষ্ণুতাকে রোধ করতে খুবই কার্যকরী। এই ওষুধ স্বাভাবিক বয়স্ক ব্যক্তিদের অস্টিওআরথ্রাইটিস প্রতিরোধ করে। ইহা নন-স্টেরয়ডাল এন্টি-ইনফ্লামেটরী ওষুধের মতই কার্যকর কিন্তু সেগুলোর চেয়ে বেশী সহনীয় এবং গ্রহণযোগ্য। অস্টিওআরথ্রাইটিস ছাড়াও এই ওষুধটি পেশী ও অস্থি সংশ্লিষ্ট আঘাত যেমন টেনড়ন ও লিগামেন্টের স্ট্রেইন নিরাময়ে সাহায্য করে।

মাত্রা ও সেবনবিধি

২৫০/২০০ মিগ্রা ট্যাবলেট: ১-২ টি ট্যাবলেট দিনে তিন বার। ঔষধটির কার্যকারীতা এবং রোগীর দেহের ওজনের ভিত্তিতে সেবন মাত্রা পরিবর্তন যোগ্য। চিকিৎসা খরচের কথা বিবেচনা করে ৬০ দিন পর সেবন মাত্রা প্রয়োজন অনুসারে কমিয়ে আনা যায়। দেহের ওজনের উপর ভিত্তি করে একটি আদর্শ সেবন বিধি নিচে দেয়া হল-
  • ৫৪ কেজির নিচে: প্রতিদিন ১০০০ মিগ্রা গ্লুকোসামিন সালফেট এবং ৮০০ মিগ্রা কনড্রয়টিন সালফেট।
  • ৫৪ কেজি থেকে ৯১ কেজি পর্যন্ত: প্রতিদিন ১৫০০ মিগ্রা গ্লুকোসামিন সালফেট এবং ১২০০ মিগ্রা কনড্রয়টিন সালফেট।
  • ৯১ কেজি এর বেশী: প্রতিদিন ২০০০ মিগ্রা গ্লুকোসামিন সালফেট এবং ১৬০০ মিগ্রা কনড্রয়টিন সালফেট।
৭৫০/৬০০ মিগ্রা ট্যাবলেট: ১ টি করে ট্যাবলেট প্রতিদিন দুইবার অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য।

ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া

এন্টিবায়োটিক/ এন্টিডিপ্রেসেন্ট/ এন্টিহাইপারটেনসিভ/ নাইট্রেট/ এন্টি এ্যারিদমিক/ এনজিওলাইটিক/ হাইপোগ্লাইসেমিক এজেন্ট/ এন্টি সিক্রেটিভ/ এন্টিএজমাটিক -এর সাথে গ্লুকোসামিন ও কনড্রয়টিনের উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। কনড্রয়টিন এন্টি কোয়াগুলেন্টস্ যেমন ওয়ারফেরিন, হেপারিন- এর রক্ত তরলীকরণ প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

প্রতিনির্দেশনা

গ্লুকোসামিন এবং কনড্রয়টিন এর কোনরূপ প্রতিনির্দেশনা জানা নেই। তবে এই উপাদানগুলির প্রতি প্রমাণিত অতিসংবেদনশীলতা থাকলে এটি তাদের প্রতি প্রতিনির্দেশিত।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

গ্লুকোসামিন ও কনড্রয়টিনের কোন উল্লেখযোগ্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি। প্লাসিবোর মত এটির কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন অল্প ও পরিবর্তনযোগ্য আন্ত্রিক গ্যাস তৈরী করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে গ্লুকোসামিন সালফেট অথবা কনড্রয়টিন সালফেট দেয়া উচিত নয়। গর্ভস্থিত শিশুর প্রতি গ্লুকোসামিন ও কনড্রয়টিন এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত যথেষ্ট পরীক্ষা এখনও করা হয়নি। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে গ্লুকোসামিন ও কনড্রয়টিনের ব্যবহার সম্পর্কিত কোন গবেষণা করা হয়নি। তাই গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালে বিশেষ সতর্কতার সাথে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গ্লুকোসামিন এবং কনড্রয়টিন গ্রহণ করা উচিত।

সতর্কতা

ডায়াবেটিস মেলিটাস এর রোগীদের গ্লুকোসামিন গ্রহণকালে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। যাদের যকৃত ও বৃক্ক ঠিকমত কাজ করে না তাদের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার নিয়ে বিশেষ কোন গবেষণা করা হয়নি। গ্লুকোসামিন এবং কনড্রয়টিন এর টক্সিকোলজিক্যাল ও ফার্মাকোকাইনেটিক বৈশিষ্ট্যগুলো এসব রোগীদের ব্যবহার নিয়ে কোনরূপ সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করেনা। তবুও, যকৃত ও বৃক্কের মারাত্নক রোগে ভুগছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র যথাযথ মেডিক্যাল সুপারভিশনে ওষুধটি দেয়া উচিত। শিশুদের ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা উচিৎ না।

থেরাপিউটিক ক্লাস

Stimulation of Cartilage formation

সংরক্ষণ

৩০° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার উপরে সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকুন, আলো ও আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন। সকল ওষুধ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।