নির্দেশনা

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা: সিমাগ্লুটাইড নিম্নোক্ত উপসর্গে নির্দেশিত-
  • প্রাপ্ত বয়স্কদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডায়েট এবং শারিরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি এটি নির্দেশিত।
  • প্রাপ্ত বয়স্কদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসে প্রতিষ্ঠিত কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং কার্ডিওভাসকুলার ইভেন্টগুলির ঝুঁকি হ্রাস করতে নির্দেশিত।
স্থুলতার চিকিৎসা:

প্রাপ্ত বয়স্কদের ডায়েট এবং শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি স্থূলকায় ও মাত্রাতিরিক্ত ওজন রোগীদের জন্য এটি নির্দেশিত যাদের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই)-
  • ৩০ কেজি/মিটার অথবা এর বেশি (স্থূলতা) অথবা
  • ২৭ কেজি/মিটার অথবা এর বেশি (অতিরিক্ত ওজন) যাদের কমপক্ষে একটি ওজন-সম্পর্কিত কোমরবিড কন্ডিশন রয়েছে (উদাহরণস্বরূপ: উচ্চরক্তচাপ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস মেলাইটাস, ডিসলিপিডেমিয়া)।

ফার্মাকোলজি

সিমাগ্লুটাইড হল একটি জিএলপি-১ এনালগ যা মানুষের জিএলপি-১ এর সাথে ৯৪% সামঞ্জস্যপূর্ণ। সিমাগ্লুটাইড একটি জিএলপি-১ রিসেপ্টর অ্যাগনিস্ট হিসেবে কাজ করে যা জিএলপি-১ রিসেপটরের সাথে যুক্ত হয়ে তাকে সক্রিয় করে। রক্তে যখন গ্লুকোজের পরিমাণ বেশী থাকে তখন সেমাগ্লুটাইড গ্লুকোজ নির্ভর পদ্ধতিতে কাজ করে ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়ায় এবং গ্লুকাগন নিঃসরণ হ্রাস করে রক্তের গ্লুকোজের পরিমান কমায়। রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমান কমানোর এই প্রক্রিয়া গ্যাস্ট্রিক এম্পটিয়িং বিলম্বিত হওয়াও ভূমিকা রাখে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সময়, সেমাগুটাইড ইনসুলিনের নিঃসরণ হ্রাস করে এবং গ্লুকাগন নিঃসরণকে বাধা দেয়না। এছাড়া সেমাগ্লুটাইড সর্বোপরি ক্ষুধা হ্রাসের মাধ্যমে শরীরের ওজন কমায় এবং চর্বি হ্রাস করে।

মাত্রা ও সেবনবিধি

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা-

সিমাগ্লুটাইড ট্যাবলেট
: রোগীকে খাবার, পানীয় ও অন্যান্য ঔষধ সেবনের কমপক্ষে ৩০ মিনিট পূর্বে ৪ আউন্স (১১৮ মি.লি.) এর কম পানি দিয়ে সিমাগ্লুটাইড গ্রহণ করতে হবে।
  • প্রাথমিক সেবনমাত্রা: প্রথম ৩০ দিন সিমাগ্লুটাইড ৩ মি.গ্রা. প্রতিদিন একবার সেবন করতে হবে।
  • পরবর্তী মাত্রা: ৩০ দিন পর ৩ মি.গ্রা. সেবনের পরে সেবনমাত্রা বাড়িয়ে ৭ মি.গ্রা. প্রতিদিন একবার সেবন করতে হবে।
  • অতিরিক্ত গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ মাত্রা: যদি প্রতিদিন ৭ মি.গ্রা. সেবন করার পরে ৩০ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় তাহলে সেবনমাত্রা বাড়িয়ে ১৪ মি.গ্রা. প্রতিদিন একবার সেবন করতে হবে।
সিমাগ্লুটাইড ইনজেকশন: এর প্রারম্ভিক মাত্রা ০.২৫ মি.গ্রা. সপ্তাহে একবার। এরপর ৪ সপ্তাহ পরে মাত্রা বাড়িয়ে ০.৫ মি.গ্রা. হবে সপ্তাহে একবার। যদি গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে না আসে তবে অন্তত ৪ সপ্তাহ পরে মাত্রা বাড়িয়ে ১ মি.গ্রা. করতে হবে সপ্তাহে একবার। সপ্তাহে ১ মি.গ্রা. এর বেশি সিমাগ্লুটাইড নির্দেশিত নয়। সিমাগ্লুটাইড সপ্তাহে একবার খাবার গ্রহনের পূর্বে অথবা পরে যে কোন সময় গ্রহন করতে হবে। পেট, উরুতে বা উপরের বাহুতে চামড়ার নীচে সিমাগ্লুটাইড ইনজেশন প্রয়োগ করতে হবে। মাত্রা পরিবর্তন না করে, প্রয়োগের স্থান পরিবর্তন করে সিমাগ্লুটাইড গ্রহন করা যেতে পারে। সিমাগ্লুটাইড কখনই মাংসপেশি অথবা শিরা পথে ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রয়োজন হলে সপ্তাহে সিমাগ্লুটাইড গ্রহন করার দিন পরিবর্তন করা যেতে পারে তবে ২ টি ডোজ এর মধ্যে অন্তত ৩ দিনের (৭২ ঘন্টা) ব্যবধান থাকতে হবে। নতুন ডোজিং এর দিন নির্বাচন করার পরে, সাপ্তাহিক ডোজ একবার করে চালিয়ে যেতে হবে।

সিমাগ্লুটাইড ইনজেকশন এবং সিমাগ্লুটাইড ট্যাবলেট এর মধ্যে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে-
  • যেসব রোগীরা সিমাগ্লুটাইড ১৪ মি.গ্রা. ট্যাবলেট প্রতিদিন ১টি করে নেয় তাদেরকে প্রতি সপ্তাহে সিমাগ্লুটাইড ০.৫ মি.গ্রা. সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশনে রূপান্তরিত করতে হবে। রোগী সিমাগ্লুটাইড ট্যাবেলেটের শেষ সেবনমাত্রার পরের দিন থেকেই সিমাগ্লুটাইড ইনজেকশন শুর করতে পারবে।
  • যেসব রোগীরা প্রতি সপ্তাহে ০.৫ মি.গ্রা. সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশন নেয় তারা সিমাগ্লুটাইডের ১৪ মি.গ্রা. ট্যাবলেটে পরিবর্তিত হতে পারবে। রোগীরা শেষ সিমাগ্লুটাইড ইনজেকশন নেয়ার ৭ দিন পরে সিমাগ্লুটাইড ট্যাবলেট নিতে পারবে।
  • সিমাগ্লুটাইড ট্যাবলেট এবং সিমাগুটাইড ১ মি.গ্রা. ইনজেকশনের মধ্যে কোন সমতুল্য সেবনমাত্রা নেই।

স্থুলতার চিকিৎসা: সিমাগ্লুটাইড এর প্রারম্ভিক মাত্রা ০.২৫ মি.গ্রা. সপ্তাহে একবার ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত। যদি রোগীরা মাত্রা বৃদ্ধির সময় সহ্য করতে না পারে, তাহলে ৪ সপ্তাহের জন্য মাত্রা বৃদ্ধি বিলম্বিত করার কথা বিবেচনা করুন। যদি রোগীরা মেইনটেন্যান্স ডোজ ২.৪ মি.গ্রা. সহ্য না করে, তবে ডোজটি সাময়িকভাবে ১.৭ মি.গ্রা. সপ্তাহে একবার সর্বোচ্চ ৪ সপ্তাহের জন্য হ্রাস করা যেতে পারে। ৪ সপ্তাহ পরে মাত্রা বাড়িয়ে ২.৪ মি.গ্রা.। সপ্তাহে ২.৪ মি.গ্রা. এর বেশি সিমাগ্লটাইড নির্দেশিত নয়। সিমাপ্লুটাইড সপ্তাহে একবার খাবার গ্রহনের পূর্বে অথবা পরে যে কোন সময় গ্রহন করতে হবে। পেট, উরুতে বা উপরের বাহুতে চামড়ার নীচে সিমাগুটাইড ইনজেশন প্রয়োগ করতে হবে। মাত্রা পরিবর্তন না করে, প্রয়োগের স্থান পরিবর্তন করে সিমাগুটাইড গ্রহন করা যেতে পারে। সিমাগুটাইড কখনই মাংসপেশি অথবা শিরা পথে ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রয়োজন হলে সপ্তাহে সিমাগুটাইড গ্রহন করার দিন পরিবর্তন করা যেতে পারে তবে ২ টি ডোজ এর মধ্যে অন্তত ২ দিনের (৪৮ ঘন্টা) ব্যবধান থাকতে হবে। নতুন ডোজিং এর দিন নির্বাচন করার পরে, সাপ্তাহিত ডোজ একবার করে চালিয়ে যেতে হবে।

ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া

সিমাগ্লুটাইড গ্যাস্ট্রিক এম্পটিয়িং এর সময় বাড়িয়ে দেয়, এর ফলে মুখে সেব্য অনেক ওষুধের শোষন ক্ষমতার উপর এর প্রভাব বিদ্যমান। যে সমস্ত মুখে সেব্য ওষুধের দ্রুত অস্ত্রের শোষন প্রয়োজন, সেসব ওষুধের সাথে সিমাগ্লুটাইড এর ব্যবহার সতর্কতার সাথে করতে হবে।

প্রতিনির্দেশনা

যাদের নিজস্ব অথবা পরিবারের কারো মেডুলারি থাইরয়েড ক্যান্সার অথবা মাল্টিপাল এন্ডোক্রাইন নিউপ্লাসিয়া সিনড্রোম ২ হওয়ার কোন তথ্য আছে। সিমাগ্লুটাইড বা এর কোন উপাদানের প্রতি অতি সংবেদনশীলতা।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

সালফোনাইলইউরিয়া এবং ইনসুলিন এর সাথে সমন্বিতভাবে গ্রহনকারী রোগীদের ক্ষেত্রে হাইপগ্লাইসেমিয়া দেখা দিতে পারে। এছাড়া সাধারণ কিছু অস্ত্রের সমস্যা যেমন বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, বমি, পেটে ব্যথা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সাধারণত এই প্রতিক্রিয়াগুলির তীব্রতা স্বল্প সময়ের জন্য হালকা বা মাঝারি ধরনের হয়ে থাকে। এছাড়া অ্যালার্জি, ইনজেকশন স্থানে প্রতিক্রিয়া, লিপডিস্ট্রফি, প্রুরিটাস এবং র‍্যাশ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে

গর্ভাবস্থায় সিমাগ্লুটাইড ব্যবহার করা উচিত নয়। যে সমস্ত রোগী গর্ভধারন করতে চান, তাদের ক্ষেত্রে সিমাগ্লুটাইড অন্তত ২ মাস পূর্বে বন্ধ করে দিতে হবে। যেহেত বুকের দুধ খাওয়ানো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি তাই বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় সেমাগ্লটাইড ব্যবহার করা উচিত নয়।

সতর্কতা

ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস: টাইপ ১ ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগীদের ক্ষেত্রে বা ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিসের চিকিৎসার জন্য সিমাগ্লুটাইড ব্যবহার করা উচিত নয়।

প্যানক্রিয়াটাইটিস: প্যানক্রিয়াটাইটিস সন্দেহ হলে সিমাগ্লুটাইড তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা উচিত এবং অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ নিশ্চিত হলে এটি পুনরায় আরম্ভ করা উচিত নয়।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি: ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির রোগীদের সিমাগ্লুটাইড ব্যবহারে পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত।

বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার

শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহার: ১৮ বছরের নিচে শিশু এবং কিশোরদের ক্ষেত্রে সিমাগ্লুটাইড এর ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য
: কোন মাত্রা সমন্বয় এর প্রয়োজন হয় না।

বৃক্কের সমস্যা: মাঝারি অথবা গুরুতর বৃক্কের সমস্যার রোগীদের জন্য কোনও মাত্রা সমন্বয় এর প্রয়োজন হয় না। এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ এর ক্ষেত্রে সেমাগ্লুটাইড প্রতিনির্দেশিত।

যকৃতের সমস্যা: যকৃতের সমস্যার রোগীদের জন্য কোনও মাত্রা সমন্বয় এর প্রয়োজন হয় না। তবে এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে সেমাগ্লুটাইড সতর্কতার সহিত ব্যবহার করতে হবে।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্য: একক মাত্রায় ৪ মিলিগ্রাম এবং এক সপ্তাহে ৪ মিলিগ্রাম পর্যন্ত মাত্রাধিক্যএর ক্লিনিকাল পরীক্ষায় রিপোর্ট করা হয়েছে। সেমাগ্লুটাইড এর মাত্রাধিক্য এ সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হল বমি বমি ভাব। সেমাগ্লুটাইড ওভারডোজ এর জন্য নির্দিষ্ট কোন প্রতিষেধক নেই। অতিরিক্ত মাত্রার ক্ষেত্রে রোগীদের উপসর্গ অনুযায়ী উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

মাত্রা সামঞ্জস্য: যখন বিদ্যমান মেটফরমিন এবং অথবা থায়াজোলিডিনডায়োন থেরাপিতে সেমাগ্লুটাইড যুক্ত হয়, মেটফরমিন এবং / অথবা থায়াজোলিডিনডায়োন এর বর্তমান ডোজ অপরিবর্তিত রাখা যেতে পারে। যখন সালফোনাইলইউরিয়া বা ইনসুলিনের বিদ্যমান থেরাপিতে সেমাগ্লুটাইড যুক্ত হয়, হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি কমাতে সালফোনাইলইউরিয়া বা ইনসুলিনের মাত্রা হ্রাস বিবেচনা করতে হবে। সেমাগ্লুটাইড এর মাত্রা সামঞ্জস্য করার জন্য রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপের প্রয়োজন নেই, তবে যদি সালফোনাইলইউরিয়া বা ইনসুলিনের মাত্রা সামঞ্জস্য করার প্রয়োজন হয় বিশেষত যখন সেমাগ্লুটাইড শুরু করা হয় এবং ইনসুলিন এর মাত্রা হ্রাস করা হয় সেক্ষেত্রে রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপের প্রয়োজন রয়েছে।

মিসড ডোজ: যদি কোনও ডোজ মিস হয় তবে এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রহন করা উচিত মিসড ডোজের ৫ দিনের মধ্যে। যদি ৫ দিনেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয় তবে মিসড ডোজটি গ্রহন না করে এবং পরবর্তী ডোজটি নিয়মিত নির্ধারিত দিনে গ্রহন করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রোগীরা সাপ্তাহিক ডোজ এর সময়সূচী নিয়মিতভাবে পুনরায় শুরু করতে পারেন।

থেরাপিউটিক ক্লাস

GLP-1 receptor agonists

সংরক্ষণ

২°সে. - ৮°সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করুন (রেফ্রিজারেটরে)। জমাট বাঁধানো যাবে না। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।