সালবিউটামল

নির্দেশনা

ব্রংকোস্পাজম: সালবিউটামল ইনহেলার ব্রংকিয়াল এ্যাজমার ব্রংকোস্পাজম এর প্রতিরােধ ও চিকিৎসায় এবং রিভার্সেবল এয়ারওয়ে অবস্ট্রা‌কশন এর ফলে সৃষ্ট ব্রংকাইটিস ও এমফাইসেমা এর চিকিৎসায় নির্দেশিত।

শরীরচর্চা জনিত ব্রংকোস্পাজম: তীব্র ডিসপনিয়া এ্যাটাক উপশমে এবং শরীর চর্চার ফলে সৃষ্ট এ্যাজমা নিবারণে অথবা প্রােফাইল্যাকটিক হিসাবে সালবিউটামল ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে।

ফার্মাকোলজি

সালবিউটামল একটি সিলেক্টিভ বিটা-২ এড্রনাে রিসেপ্টর এগােনিস্ট। থেরাপিউটিক ডােজে এটি ব্রংকিয়াল মসৃণ মাংসপেশীর বিটা-২ এড্রেনাে রিসেপ্টর এর উপর কাজ করে এবং কার্ডিয়াক মাংসপেশীর বিটা-১ এড্রেনাে রিসেপ্টর এর উপর সামান্য অথবা কোনাে ক্রিয়া নেই। সালবিউটামল রিভার্সেবল এয়ারওয়ে অবস্ট্রাকশন এ খুব তাড়াতাড়ি (৫ মিনিটের মধ্যেই) ব্রংকোডাইলেটেশন করে যা ৪-৬ ঘন্টা স্থায়ী হয়। এছাড়াও এর মাস্ট সেল এর উপর এন্টিইনফ্লামেটরী ইফেক্টের জন্য ইহা ব্রংকোকনস্ট্রিক্টর মেডিয়েটর যেমন হিস্টামিন, নিউট্রোফিল কেমােট্যাকটিভ ফ্যাক্টর (NCF) এবং প্রােস্টাগ্ল্যানডিন ডি২ এর নিঃসরণকে বাধা প্রদান করে।

ঔষধের মাত্রা

সালবিউটামল ইনহেলার শুধুমাত্র মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবহারের জন্য। প্রতিবার ব্যবহারের পূর্বে সালবিউটামল ইনহেলার ভালভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।

ব্রংকোস্পাজম এর তীব্র এপিসােড নিরাময়ে:
  • প্রাপ্তবয়স্ক: ১ অথবা ২টি পাফ্‌ প্রয়ােজন অনুযায়ী। ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৮ টি পাফ্ দেয়া যাবে।
  • শিশু: প্রাপ্তবয়স্ক ডােজের অর্ধেক।
এলার্জেন অথবা শরীরচর্চা দ্বারা সৃষ্ট ব্রংকোম্পাজম প্রতিরােধে:
  • প্রাপ্তবয়স্ক: ২ টি পাফ্, শরীরচর্চার অথবা এলার্জেন সংস্পর্শ আসার ১৫ মিনিট পূর্বে। দৈনিক সর্বোচ্চ ২টি করে পাফ ৪ বার নেয়া যাবে।
  • শিশু: প্রাপ্তবয়স্ক ডােজের অর্ধেক।
ক্রনিক থেরাপী:
  • প্রাপ্তবয়স্ক: ২০০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত (২টি পাফ্) দিনে ৪ বার।
  • শিশু: ২০০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত (২টি পাফ্) দিনে ৪ বার।

সেবনবিধি

ইনহেলার ব্যবহার সহজ মনে হলেও অনেক রােগী সঠিকভাবে এর ব্যবহার জানে না। রােগী সঠিকভাবে ইনহেলার ব্যবহার না করলে তার ফুসফুসে পর্যাপ্ত মাত্রায় ঔষধ প্রবেশ করে না। ইনহেলারের নিয়মিত ও সঠিক ব্যবহার এ্যাজমা আক্রমন রােধ করে ও এর তীব্রতা কমায়।

নিম্নলিখিত নিয়মাবলী পালন করে আপনি আশানুরূপ ফল পেতে পারেন যা অ্যাজমা এসােসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত "National Asthma Guidelines for Medical Practitioners" অনুসরণে:
  1. প্রথমে ঢাকনা খুলে নিন
  2. প্রতিবার ব্যাবহারের পুর্বে ইনহেলার ভালোভাবে ঝকিয়ে নিন।
  3.  ইনয়েলারটি যদি নতুন হয় অথবা এক সপ্তাহ বা এর অধিক বিরতিতে ব্যবহৃত হয় তাহলে এই পরীক্ষামূলক ব্যবহার প্রয়োজন; অর্থাৎ একটি মাত্রা বাতাসে নিঃসৃত করে দেখতে হবে।
  4. সুবিধাজনকভাবে যতটুকু সম্ভব শ্বাস ত্যাগ করুন এবং ইনহেলালকে সোজাভাবে ধরুন।
  5. শ্বাস বন্ধ অবস্থায় ইনহেলারের মুখ আপনার মুখের ভিতর এমনভাবে পুরে নিন যেন আপনার মুখ ও ইনহেলারের মধ্যে কোন ফাঁক না থাকে।
  6. ক্যানিস্টারে চাপ দিন এবং সাথে সাথে মুখ দিয়ে অবিরাম কিন্তু ধীর গতিতে পূর্ণ মাত্রায় শ্বাস নিন।
  7. আপনার মুখ থেকে ইনহেলার বের করে নিন। ইনহেলার করার ১০ সেকেন্ড বা যতক্ষন সম্ভাব শ্বাস বন্ধ রাখুন এবং পরে ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করুন।
  8. ডাক্তার যদি প্রতিবার একাধিক মাত্রা গ্রহনের পরামর্শ দেশ, তবে দ্বিতীয় চাপটির জন্য একসাথে ১ মিনিট অপেক্ষা করুন। অতঃপর ইনহেলার ভালোভাবে ঝাকিতে নিন এবং ৪ নং থেকে ৭ নং পর্যন্ত নিয়মাবলীর পুনরাবৃত্রি করুন।
  9. ব্যবহারের পর ক্যাপ দিয়ে এ্যাকচুয়েটরের মুখ বন্ধ রাখুন। ইনহেলার ব্যবহারের পর মুখে সাধারণ পানি দিয়ে কুলি করুন।
  10. আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পুরো পদ্ধতিটা মাঝে মাঝে অনুশীলন করুন। যদি কোন সাহা ধোঁয়া দেখতে পান তবে বুঝবেন যে ঠোঁট দিয়ে এ্যাকচুয়েটরের মুখ ভালোভাবে ঢোকে নাই অথবা আপনি চাপের সাথে শ্বাস নিচ্ছেন না। এটা পদ্ধতিগত ভুল। এমন হলে ৪ নং পদ্ধতিটি আবার চেষ্টা করুন।
ইনহেলার পরিষ্কার করার নিয়মাবলী: সপ্তাহে অন্তত একবার আপনার ইনহেলার পরিষ্কার করুন। ক্যানিস্টারটি এ্যাকচুয়েটর থেকে আলাদা করুন এবং এ্যাকচুয়েটর ও কাভার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। কিন্তু ধাতব ক্যানিস্টারটিকে কখনই পানিতে ভিজাবেন না। অতঃপর এ্যাকচুয়েটর ও কাভার শুকিয়ে নিন এবং ধাতব ক্যানিস্টারটি সাবধানে এ্যাকচুয়েটরের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে নিন। মাউথপিস কাভারটি সঠিকভাবে স্থাপন করুন।

ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া

সাধারণত সালবিউটামল এবং নন-সিলেক্টিভ বিটা-ব্লকিং ওষুধ একসাথে প্রেসক্রাইব করা যাবে না। বিটা-২ এগােনিস্ট দিয়ে চিকিৎসা করালে মারাত্নক হাইপােক্যালেমিয়া হতে পারে। সালবিউটামল এর সাথে জ্যানথিন জাতক, স্টেরয়েড, ডাইইউরেটিকস্ দিয়ে সমন্বিত চিকিৎসা এবং অক্সিজেনের অভাব এ্যাজমার তীব্রতা বাড়াতে পারে বলে এসব ক্ষেত্রে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সিরাম পটাশিয়াম লেভেল পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

প্রতিনির্দেশনা

যারা সালবিউটামল অথবা এর উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে সালবিউটামল ইনহেলার বিপরীত নির্দেশিত।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

সালবিউটামল সাধারণত সুসহনীয়। মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণের সময় কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু কিছু রােগীর ক্ষেত্রে কাঁপুনি, দুশ্চিন্তা, মাংসপেশীতে খিচুনী, মাথা ব্যথা, বুক ধড়ফর করা, হৃৎপিন্ডের গতি কিছুটা বেড়ে যাওয়া, কার্ডিয়াক এরিদমিয়া (এর মধ্যে রয়েছে এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন, সুপ্রাভেন্টিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া এবং এক্সট্রাসিসটোল) হতে পারে। মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে সালবিউটামল ব্যবহারের ফলে মুখে ও গলায় চুলকানি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে

গর্ভাবস্থা ক্যাটেগরী সি ড্রাগ। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সালবিউটামল ইনহেলার অথবা সালবিউটামল সালফেট এর উপর পর্যাপ্ত ও সুনিয়ন্ত্রিত গবেষণা না থাকায় গর্ভাবস্থায় যদি একান্তই প্রয়ােজন হয় তাহলে দেয়া উচিত। এই ইনহেলার মাতৃদূগ্ধ নিঃসৃত হয় কিনা তা জানা যায়নি। তাই সালবিউটামল ইনহেলার স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে সর্তকতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।

সতর্কতা

প্যারাডক্সিকাল ব্রংকোস্পাজম: মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে সালবিউটামল ব্যবহারের ফলে প্যারাডক্সিকাল ব্রংকোস্পাজম হতে পারে যার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যদি প্যারাডক্সিকাল ব্রংকোস্পাজম হয়, তবে সালবিউটামল ইনহেলার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এটি ধরে নেয়া হয় যে, যখন একটি নতুন ক্যানিস্টার ব্যবহার শুরু করা হয় তখন মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবহৃত ফর্মুলেশন গুলাের জন্য প্যারাডক্সিকাল ব্রংকোম্পাজম হয়ে থাকে।

কার্ডিওভাসকুলার ইফেক্ট: কিছু রােগীর ক্ষেত্রে সালবিউটামল অন্যান্য বিটা-২ এড্রেনাে রিসেপ্টর এগােনিস্ট এর মত কার্ডিওভাসকুলার ইফেক্ট যেমন পালস্ রেট বা ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সালবিউটামল ইনহেলার বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও, বিটা-এগােনিস্ট ব্যবহারের ফলে ইসিজি পরিবর্তন যেমন টি-ওয়েভ সমান হয়ে যাওয়া, কিউটিসি ইন্টারভেল বেড়ে যাওয়া এবং এসটি সেগমেন্ট ডিপ্রেশন হওয়া। এগুলাের কোনাে ক্লিনিক্যাল যােগাযােগ জানা যায়নি। তাই, সালবিউটামল ইনহেলার যাদের কার্ডিওভাসকুলার ডিসঅর্ডার বিশেষ করে করোনারী ইনসাফিসিয়েন্সি, কার্ডিয়াক এরিদমিয়া, বা উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের অন্যান্য সিমপ্যাথােমিমেটিক অ্যামাইনের মত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।

তাৎক্ষণিক হাইপারসেনসেটিভ বিক্রিয়া: মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে সালবিউটামল ব্যবহারের ফলে তাৎক্ষণিক হাইপারসেনসেটিভ বিক্রিয়া যেমন আর্টিকারিয়া, এনজিওইডিমা, র‍্যাশ, ব্রংকোম্পাজম, এনাফাইল্যাক্সিস এবং ওরােফ্যারিনজিয়াল ইডিমা হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সাথে সাথেই সালবিউটামল ইনহেলার বন্ধ করতে হবে।

একই সাথে বিরাজমান অবস্থা: সালবিউটামল ইনহেলার যাদের কনভালসিভ ডিসঅর্ডার, হাইপোথাইরয়ডিসম অথবা ডায়াবেটিস মেলিটাস আছে এবং যারা সিমপ্যাথােমিমেটিক অ্যামাইনের প্রতি সংবেদনশীল নয় তাদের অন্যান্য সিমপ্যাথােমিমেটিক অ্যামাইনের মত সর্তকতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। বেশী মাত্রায় ইন্ট্রাভেনাস সালবিউটামল আগে থেকেই থাকা ডায়াবেটিস মেলিটাস এবং কিটোএসিডােসিসকে বাড়িয়ে দেয়।

বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার

শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহার: ৪ বছর বয়সী শিশু এবং তদুর্ধ্বদের ক্ষেত্রে সালবিউটামল ইনহেলার এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠিত আছে।

থেরাপিউটিক ক্লাস

Short-acting selective & β2-adrenoceptor stimulants

সংরক্ষণ

ক্যানিস্টারটি উচ্চচাপযুক্ত হওয়ায় এটি আপাতদৃষ্টিতে খালি মনে হলেও ছিদ্র করা, ভাঙ্গা অথবা পােড়ানাে যাবে না। সূর্যালােক বা তাপ থেকে দূরে রাখুন। ৩০° সে. তাপমাত্রার নীচে সংরক্ষণ করুন। হিমায়িত করা থেকে সতর্ক থাকুন। চোখের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখুন। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। কেবলমাত্র রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বিক্রয় ও বিতরণযােগ্য।