ডক্সারক্যালসিফেরল
নির্দেশনা
ডক্সারক্যালসিফেরল ইনজেকশন, ডায়ালাইসিস নিচ্ছে এমন ক্রনিক কিডনি রোগে (CKD) আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের সেকেন্ডারি হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজমের চিকিৎসার জন্য নির্দেশিত।
ফার্মাকোলজি
ডক্সারক্যালসিফেরল একটি কৃত্রিম ভিটামিন ডি২ এনালগ। সক্রিয় মেটাবোলাইট ১α,২৫-ডাইহাইড্রোক্সিভিটামিন D2 (1α,25-(OH)2D2) গঠনের জন্য এর বিপাকীয় সক্রিয়করণের প্রয়োজন হয়, যা ভিটামিন ডি রিসেপ্টর (VDR) এর সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হয় ফলে ভিটামিন ডি এর ক্রিয়াশীল পথের সিলেক্টিভ সক্রিয়করণ হয়। ভিটামিন ডি এবং ডক্সারক্যালসিফেরল পিটিএইচ (PTH) সংশ্লেষণ এবং নিঃসরণকে বাধা দিয়ে পিটিএইচ (PTH) এর মাত্রা কমায়।
মাত্রা ও সেবনবিধি
ওষুধ গ্রহণের পথ: ডক্সারক্যালসিফেরল ইনজেকশন শিরাপথে প্রয়োগ করতে হবে। ডক্সারক্যালসিফেরল ইনজেকশন দ্বারা চিকিৎসা শুরুর পূর্বেই সিরাম ক্যালসিয়াম স্বাভাবিক মাত্রার ঊর্ধ্বসীমার উপরে নেই তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রয়োগ পদ্ধতি:
প্রয়োগ পদ্ধতি:
- ডক্সারক্যালসিফেরল ইনজেকশন ডায়ালাইসিসের শেষে বোলাস মাত্রা হিসাবে শিরাপথে প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রয়োগ করার আগে ডক্সারক্যালসিফেরল ইনজেকশন ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে; সলিউশনটি স্বচ্ছ ও বর্ণহীন হতে হবে। সলিউশনটি স্বচ্ছ না হলে অথবা ক্ষুদ্রকণা উপস্থিত থাকলে তা ব্যবহার করা যাবে না।
- ডক্সারক্যালসিফেরল ইনজেকশন ডায়ালাইসিসের শেষে ৪ মাইক্রোগ্রাম মাত্রায় সপ্তাহে তিনবার শিরাপথে বোলাস হিসাবে প্রয়োগ করা শুরু করতে হবে (একদিন পর পর দিতে হবে)।
- ইন্ট্যাক্ট প্যারাথাইরয়েড হরমোন (PTH) এর মাত্রাকে কাঙ্ক্ষিত থেরাপিউটিক সীমার মধ্যে এবং সিরাম ক্যালসিয়ামকে স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখার জন্য ডক্সারক্যালসিফেরল এর মেইনটেন্যান্স মাত্রাকে টার্গেট করতে হবে।
- থেরাপি শুরুর পর অথবা মাত্রা সমন্বয় করার সময় সাপ্তাহিকভাবে সিরাম ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ইন্ট্যাক্ট পিটিএইচ (PTH) মাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
- ইন্ট্যাক্ট পিটিএইচ (PTH) এর উপর ভিত্তি করে ডক্সারক্যালসিফেরল ইনজেকশনের মাত্রা টাইট্রেট করতে হবে। যদি ইন্ট্যাক্ট পিটিএইচ (PTH) ৫০% না কমে এবং লক্ষ্য সীমাতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় তাহলে ৮ সপ্তাহ পর পর ১ মাইক্রোগ্রাম থেকে ২ মাইক্রোগ্রাম করে মাত্রা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সর্বোচ্চ মাত্রা হচ্ছে সপ্তাহে ১৮ মাইক্রোগ্রাম। মাত্রা বাড়ানোর আগে সিরাম ক্যালসিয়াম স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। ইন্ট্যাক্ট পিটিএইচ (PTH) ক্রমাগত এবং অস্বাভাবিকভাবে কম থাকলে এডায়নামিক হাড়ের রোগের ঝুঁকি কমাতে অথবা সিরাম ক্যালসিয়াম সবসময় স্বাভাবিক সীমার উপরে থাকলে হাইপারক্যালসেমিয়ার ঝুঁকি কমাতে মাত্রা স্থগিত বা হ্রাস করতে হবে। স্থগিত করা হলে, ওষুধটি এক সপ্তাহ পর অন্তত ১ মাইক্রোগ্রাম কম মাত্রায় পুনরায় চালু করা উচিত।
ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া
অন্য ওষুধের সাথেঃ উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়ামযুক্ত ওষুধ অথবা অন্যান্য ভিটামিন ডি জাতীয় উপাদান একত্রে ব্যবহার করলে হাইপারক্যালসেমিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। থায়াজাইড ডাইইউরেটিক প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের নিঃসরণ কমিয়ে হাইপারক্যালসেমিয়া সৃষ্টি করে। সিরামে ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব বেশি বেশি করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে ডক্সারক্যালসিফেরল এর মাত্রা সমন্বয় করতে হবে। ডক্সারক্যালসিফেরল হাইপারক্যালসেমিয়া সৃষ্টি করতে পারে যা ডিজিটালিস টক্সিসিটির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ডিজিটালিস ওষুধ গ্রহণকারী রোগীদের ক্ষেত্রে ডক্সারক্যালসিফেরল দ্বারা চিকিৎসা শুরু বা মাত্রা সমন্বয় করার সময় লক্ষণ ও উপসর্গের জন্য রোগীদেরকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সিরাম ক্যালসিয়াম পর্যবেক্ষণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। সাইটোক্রোম পি৪৫০ (P450) ইনহিবিটর সমূহ ডক্সারক্যালসিফেরল এর ২৫-হাইড্রোক্সিলেশনকে বাধা দেয় এবং এর ফলে সক্রিয় ডক্সারক্যালসিফেরল ময়েটি (moiety) গঠন হওয়া হ্রাস পায়। রোগী যদি সাইটোক্রোম পি৪৫০ (P450) ইনহিবিটর দ্বারা চিকিৎসা শুরু বা বন্ধ করে, তাহলে ডক্সারক্যালসিফেরল এর মাত্রা সমন্বয় করার প্রয়োজন হতে পারে। নিবিড়ভাবে ইন্ট্যাক্ট পিটিএইচ (PTH) এবং সিরাম ক্যালসিয়াম ঘনত্ব পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এনজাইম ইনডিউসারগুলো (যেমন, গ্লটেথিমাইড এবং ফেনোবারবিটাল) ডক্সারক্যালসিফেরল এর ২৫-হাইড্রোক্সিলেশনকে প্রভাবিত করতে পারে। এনজাইম ইনডিউসার দ্বারা চিকিৎসা শুরু বা বন্ধ করার সময় ডক্সারক্যালসিফেরল এর মাত্রা সমন্বয় করার প্রয়োজন হতে পারে। ডক্সারক্যালসিফেরল এবং উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত ওষুধ একসাথে ব্যবহার করলে হাইপারম্যাগনেসেমিয়া এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃক্কের দীর্ঘস্থায়ী ডায়ালাইসিস রোগীদের ক্ষেত্রে ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত ওষুধ এবং ডক্সারক্যালসিফেরল এর ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
প্রতিনির্দেশনা
যাদের ডক্সারক্যালসিফেরল বা এই ওষুধের অন্যান্য উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রতিনির্দেশিত। এটি হাইপারক্যালসেমিয়া এবং ভিটামিন ডি টক্সিসিটির ক্ষেত্রেও প্রতিনির্দেশিত।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো হচ্ছে ইনফেকশন/ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন/ভাইরাল ইনফেকশন, কোষ্ঠকাঠিন্য, রাইনাইটিস, এনিমিয়া, কাশি, শ্বাসকষ্ট, প্যারেস্থেসিয়া, দুর্বলতা, অনিদ্রা, হাইপারটোনিয়া এবং এনজিনা পেক্টোরিস।
গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে
গর্ভাবস্থায়ঃ গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ডক্সারক্যালসিফেরল ব্যবহার সম্পর্কিত সীমিত তথ্য রয়েছে যা গুরুতর জন্মগত ত্রুটি, গর্ভপাত অথবা মা অথবা ভ্রুণের উপর বিরূপ প্রভাবের জন্য ওষুধ-সম্পর্কিত ঝুঁকি সনাক্ত করতে অপর্যাপ্ত।
স্তন্যদানকালেঃ ডক্সারক্যালসিফেরল এর জন্য মায়ের ক্লিনিক্যাল প্রয়োজনীয়তা বিবেচনার সাথে সাথে মায়ের দুধ পানকারী শিশুর উপর ডক্সারক্যালসিফেরল থেকে বা মায়ের বর্তমান শারীরিক অবস্থার কারণে সম্ভাব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং স্তন্যদানের ফলে শিশুর বিকাশ ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতাসমূহ বিবেচনা করতে হবে।
স্তন্যদানকালেঃ ডক্সারক্যালসিফেরল এর জন্য মায়ের ক্লিনিক্যাল প্রয়োজনীয়তা বিবেচনার সাথে সাথে মায়ের দুধ পানকারী শিশুর উপর ডক্সারক্যালসিফেরল থেকে বা মায়ের বর্তমান শারীরিক অবস্থার কারণে সম্ভাব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং স্তন্যদানের ফলে শিশুর বিকাশ ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতাসমূহ বিবেচনা করতে হবে।
সতর্কতা
ডক্সারক্যালসিফেরল দ্বারা চিকিৎসা চলাকালীন হাইপারক্যালসেমিয়া হতে পারে এবং তা থেকে কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া ও খিঁচুনি হতে পারে। গুরুতর হাইপারক্যালসেমিয়ার ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসা শুরুর আগে এবং চিকিৎসা চলাকালীন সিরাম ক্যালসিয়াম পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী মাত্রা সমন্বয় করতে হবে। হেমোডায়ালাইসিসের রোগীদেরকে ডক্সারক্যালসিফেরল প্রয়োগের পর অ্যানজিওইডিমা, হাইপোটেনশন, প্রতিক্রিয়াহীনতা, বুকের অস্বস্তিভাব, শ্বাসকষ্ট এবং কার্ডিওপালমোনারি অ্যারেস্টের লক্ষণ সহ অ্যানাফাইল্যাক্সিস দেখা গেছে। চিকিৎসা শুরু করার সময় অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়ার জন্য রোগীদেরকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে, ওষুধ বন্ধ করে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। ইন্ট্যাক্ট পিটিএইচ (PTH) মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে নিম্ন স্তরে থাকলে এডায়নামিক হাড়ের রোগ হতে পারে এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। অতিরিক্ত অবনমন এড়াতে ইন্ট্যাক্ট পিটিএইচ (PTH) মাত্রা পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে মাত্রা সমন্বয় করতে হবে। যকৃতের অকার্যকারিতার রোগীদের ক্ষেত্রে ইন্ট্যাক্ট পিটিএইচ (PTH), ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রা বেশ কয়েকবার পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
মাত্রাধিক্যতা
ডক্সারক্যালসিফেরলের মাত্রাধিক্য থেকে হাইপারক্যালসেমিয়া, হাইপারক্যালসিইউরিয়া এবং হাইপারফসফেটেমিয়া হতে পারে। তীব্র মাত্রাধিক্যের চিকিৎসায় সহায়ক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে এবং ডক্সারক্যালসিফেরল প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সিরাম ক্যালসিয়ামের মাত্রা পরিমাপ করতে হবে। ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে রক্ত থেকে ডক্সারক্যালসিফেরল অপসারণ করা যায় বলে প্রত্যাশিত নয়।
সংরক্ষণ
শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। আলো থেকে দূরে, ঠাণ্ডা (২৫° সে. এর নিচে) ও শুষ্ক স্থানে রাখুন। প্রথমবার ব্যবহারের পর অব্যবহৃত অংশ প্রয়োজন হলে ৩ দিন পর্যন্ত ২° সে. থেকে ৮° সে. তাপমাত্রায় রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করুন।