ডিসোজেসট্রেল

নির্দেশনা

যে সমস্ত মায়েরা গর্ভধারণ চাননা তাদের জন্য গর্ভনিরোধক পিল ডিসোজেসট্রেল। গর্ভনিরোধক হিসেবে ডিসোজেসট্রেল এর কার্যকারীতা পরীক্ষা দ্বারা প্রমানিত। যে সমস্ত মায়েরা ইস্ট্রোজেনের প্রতি সংবেদনশীলতা আছে, তাদের জন্য ডিসোজেসট্রেল একটি বিকল্প ব্যবস্থা। মায়ের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের জন্যও এটি অত্যন্ত সহনশীল ও কার্যকরী জন্মনিরোধক।

বিবরণ

ইহাতে আছে অতি অল্পমাত্রায় মহিলাদের সেক্স হরমোন, প্রোজেট্রোজেন- ডেসোলেস্ট্রেল যে কারণে ডিসোজেসট্রেলকে প্রোজেস্টোজেন অনলী পিল (পিঅপি) বলা হয়। প্রচলিত কম্বাইডন্ড পিলের মত ডিসোজেসট্রেলে ইস্ট্রোজেন হরমোন থাকে না, উল্লেখ্য ইস্ট্রোজেন হরমোন পরবর্তীতে প্রোজেস্টোজেনে পরিবর্তিত হয়। অধিকাংশ মিনিপিল প্রাথমিক ভাবে শুক্রানুকোষ (স্পার্সসেল) কে গর্ভে প্রবেশে বাধা দেয় তবে সবসময় এগসেলকে পরিপক্ক হতে বাধা দিতে পারে না। ডিসোজেসট্রেল অন্যান্য পিল হতে আলাদা কারন এর সুনির্দিষ্ট মাত্রার ডোজ এগসেলকে পরিপক্ক হতে বাধা দান করতে সক্ষম। সে কারণে ডিসোজেসট্রেল জন্মনিরোধক হিসেবে অত্যন্ত কার্যকরী। অন্য সব কম্বাইন্ড পিলের বিপরীতে যে সব মায়েরা ইস্ট্রোজেন পিল সহ্য করতে পারেন না বা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তারা ডিসোজেসট্রেল ব্যবহার করতে পারেন। অসুবিধা হিসেবে ডিসোজেসট্রেল সেবনে কোন কোন ক্ষেত্রে যোনিপথে অনিয়মিতভাবে সামান্য রক্তপাত হতে পারে তবে অনেকের ক্ষেত্রে এরকম কোন উপসর্গ একেবারেই থাকে না।

মাত্রা ও সেবনবিধি

কোন বিরতি ছাড়াই ডিসোজেসট্রেল প্রতিদিন একটি করে ট্যাবলেট নির্দিষ্ট সময়ে সেবন করতে হবে। প্রতিদিনের সেবনের নির্দিষ্ট সময় থেকে তিন ঘণ্টার বেশী তারতম্য করা যাবেনা।

কখন ও কিভাবে ট্যাবলেট খেতে হবে: ডিসোজেসট্রেল এর প্রতিটি স্টিপে ২৮ টি ট্যাবলেট আছে। স্ট্রিপের সম্মুখ ভাগে দুই ট্যাবলেটের সাথে তীর চিহ্ন অংকিত আছে। স্টিপের অপর পিঠে প্রতিটি ট্যাবলেটের পাশে সপ্তাহের কোন দিন খেতে হবে তা উল্লেখ করা আছে। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে পানি যোগে একটি ট্যাবলেট সেবন করুন। প্রতিবার যখন নতুন স্টিপ হতে ডিসোজেসট্রেল ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করবেন তখন একেবারে প্রথম সারি থেকে খাবেন। উদাহরণ স্বরূপ, যদি বুধবার ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করেন তবে যে ট্যাবলেটে প্রথম বুধবার লেখা আছে তা থেকে শুরু করল। স্ট্রিপের ট্যাবলেট শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন একটি করে ট্যাবলেট সেবন অব্যাহত রাখুন। সবসময় তীর চিহ্ন অনুসরণ করুন। এভাবে ট্যাবলেট খেলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার ট্যাবলেট খাওয়া হয়েছে কিনা। ট্যাবলেট খাওয়া অবস্থায় কোন কোন ক্ষেত্রে যোনিপথে সামান্য রক্তক্ষরণ হতে পারে। এমতাবস্থায় ট্যাবলেট সেবন বন্ধ না করে তা অব্যাহত রাখুন। আপনার স্ট্রিপ শেষ হয়ে গেলে অবশ্যই নতুন স্ট্রিপ থেকে ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করুন এবং মাসিক শুরুর জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নাই। আপনার প্রয়োজনে যে কোন দিন ট্যাবলেট খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারেন। ট্যাবলেট খাওয়া বন্ধ করে দিলে গর্ভধারনের ব্যাপারে আপনি আর সুরক্ষিত থাকবেন না।

ডিসোজেসট্রেল এর প্রথম প্যাক শুরু: বর্তমানে আপনি যদি কোন হরমোনাল জন্মনিরোধক ব্যবহার না করেন তবে মাসিক শুরু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। মাসিক শুরুর প্রথম দিন ডিসোজেসট্রেল ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করুন। যদি মাসিক শুরুর ২য় দিন থেকে ৫ম দিনের মধ্যে ডিসোজেসট্রেল শুরু করেন তবে ট্যাবলেট শুরুর দিন থেকে ৭ম দিন পর্যন্ত বেরিয়ার মেথড (কনডম) ব্যবহার করুন।

যখন কম্বাইন্ড পিল পরিবর্তন করে ডিসোজেসট্রেল খাবেন: কম্বাইন্ড পিলের সর্বশেষ কার্যকরী ট্যাবলেট সেবনের পরের দিন থেকে ডিসোজেসট্রেল সেবন শুরু করুন। এক্ষেত্রে আলাদা করে অন্য জন্ম নিরোধক ব্যবহার করার দরকার নাই। যখন মিনিপিল, ইঞ্জেকশন, ইমপ্লান্ট অথবা হরমোনাল আই ইউ ডি পরিবর্তন করে বা অন্য কোন মিনিপিল পরিবর্তন করে যে কোন দিন ডিসোজেসট্রেল শুরু করতে পারেন। আই ইউ ডি সরানোর দিন, পরবর্তী ইঞ্জেকশনের দিন থেকেও ডিসোজেসট্রেল শুরু করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত জন্য নিরোধক ব্যবহার করার প্রয়োজন নাই।

বাচ্চা থাকলে অথবা গর্ভপাত হলে: প্রথম ট্রাইমেস্টারে গর্ভপাতের সাথে সাথেই ডিসোজেসট্রেল শুরু করতে হবে। এখানে আলাদা করে অন্য গভনিরোধক ব্যবহার করার দরকার। নাই। সন্তান জন্মদানের পরে অথবা দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে ডিসোজেসট্রেল খাওয়ার জন্য মাসিক শুরু পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। যদি এ অবস্থায় ২১ দিন অতিবাহিত হয়ে যায় সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থা নাই নিশ্চিত হয়ে ডিসোজেসট্রেল শুরু করুন। তবে এক্ষেত্রে ডিসোজেসট্রেল ট্যাবলেট শুরুর দিন থেকে ৭ম দিন পর্যন্ত বেরিয়ার মেথড (কনডম) ব্যবহার করুন।

একের অধিক দিন ডিসোজেসট্রেল খেতে ভুলে গেলে-
  • যদি ট্যাবলেট খেতে ১২ ঘন্টার বেশী দেরী হয়: তাহলে মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্যাবলেটটি খেয়ে ফেলুন এবং পরবর্তী ট্যাবলেট সময়মত খান। অর্থাৎ এক্ষেত্রে একই দিনে দুটো ট্যাবলেট খেতে হবে। এটি ক্ষতিকর না। একাধিক ট্যাবলেট খেতে ভুলে গেলে আগের ট্যাবলেটগুলো খাবেন না। এ অবস্থায় আপনি গর্ভধারণের ব্যাপারে সুরক্ষিত নয়। ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান এবং অতিরিক্ত কোন জন্ম নিরোধক যেমন কনডম ব্যবহার করুন। যদি আপনি নির্দিষ্ট ট্যাবলেট খেতে ১২ ঘন্টার বেশী দেরি করেন এবং উক্ত সময়ে সহবাস করেন তবে ইমারজেন্সি জন্ম নিরোধক ব্যবহার করুন।
  • যদি ১২ ঘন্টার কম সময় হয়: মনে পড়ার সাথে সাথেই ভুলে যাওয়া ট্যাবলেটটি খান এবং পরবর্তী ট্যাবলেট নির্ধারিত সময়ে খান। এতে করে আপনি গর্ভধারণের ব্যাপারে সুরক্ষিত থাকবেন। ট্যাবলেট শুরুর প্রথম সপ্তাহে যদি এক বা একাধিক ট্যাবলেট সেবনে ভুলে যান এবং সহবাস করেন তবে গর্ভবর্তী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যত বেশী ট্যাবলেট সেবন ভুলে যাবেন গর্ভধারনের সম্ভাবনা তত বাড়ে।
বমি হলে বা চারকোল ব্যবহার করলে: ট্যাবলেট সেবনের ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে বমিহলে বা প্রয়োজনে চারকোল ব্যবহৃত হলে ডিসোজেসট্রেল ট্যাবলেট সঠিকভাবে শোষিত নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে ভুলে যাওয়া ডোজের নির্দেশনা অনুসরণ করুণ।

ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া

এনজাইম ইনডিউসিং ড্রাগগুলো ডিসোজেসট্রেল এর ক্লিয়ারেন্স বাড়িয়ে দেয় এবং এতে ব্রেক থ্রু ব্লিডিং হতে পারে যা জন্মনিরোধে সফল না হওয়ার কারণ হিসেবে দাড়াতে পারে। হাইডানটোয়েন্স, বারবিচুরেটস, প্রাইমিডোন, কার্বামাজাপিন, রিফামপিসিন, অক্সকার্বামাজাপিন, রাইফাবুটিন, ফেলবোমেট, রিটোনাভির, গ্রাইসোফুলভিন এবং সেন্টজোন্স ওয়ার্ট আছে এমন পণ্যের সাথে ডিসোজেসট্রেল এর পারস্পরিক বিক্রিয়া হতে পারে, চারকোলের সাথে ব্যবহারে ডিসোজেসট্রেল এর শোষণ কমে যায়।

প্রতিনির্দেশনা

গর্ভধারণ হয়েছে বা হতে পারে বলে সন্দেহ আছে। ভেনাস থ্রোম্বোসিস, হেপাটিক ডিজিস (যকৃতের অস্বাভাবিকতা), প্রোজেস্টোজেন নির্ভর টিউমার, অজানা কারণে যোনিপথে রক্তপাত, এই ঔষুধের কোন উপাদানের প্রতি বিশেষ সংবেদশীলতা প্রভৃতি ডিসোজেসট্রেল ব্যবহারে সতর্ক হওয়া দরকার।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

সাধারণত: অনিয়মিত মাসিক, মাসিকের অনুপস্থিতি, মাথা ব্যথা, ওজন বৃদ্ধি, স্তনে ব্যথা, ব্রন, বমিবমিভাব, মানসিক পরিবর্তন, যৌন চাহিদা কমে যাওয়া প্রভৃতি। অপেক্ষাকৃত কম: যোনিতে প্রদাহ, ব্যাথাযুক্ত মাসিক, ওভারীতে সিস্ট, বমি হওয়া, চুলপড়া, দুর্বলতা, কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে সমস্যা প্রভৃতি। খুব কম: চামড়ায় লাল দাগ, ফুলে যাওয়া, চুলকানী, আর্টিকারিয়া, এরিথমা নোডাসোম।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে

ডিসোজেসট্রেল গর্ভাবস্থায় নির্দেশিত নয়। ইহা মাতৃদুগ্ধের মান বা পরিমান পরিবর্তন করে না। ডেসোজেস্ট্রিলের একটি মেটাবোলাইট এটোনোজেস্ট্রেল মাতৃদুগ্ধের সাথে সামান্য পরিমাণ নি:সৃত হয় তবে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কি তা জানা যায়নি। যাহোক সাত মাসের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় ডিসোজেসট্রেল সেবনকালীন মাতৃদুগ্ধ পানে বাচ্চার কোন ক্ষতি হয় না।

সতর্কতা

এপিডেমিওলোজিক্যাল গবেষনায় পাওয়া যায় কম্বাইন্ড ওরাল কন্ট্রাসেন্টিভ ভেনাস থ্রোম্বোইম্বোলিজম, ডিপভেইন থ্রোম্বোসিস, পালমোনারী ইম্বোলিজম, প্রভৃতির ঝুঁকি বাড়ায়। ডেসোজেস্ট্রেল ঠিক একই রকম ঝুঁকি বাড়ায় কিনা তা জানা যায়নি। সার্জারী বা অসুস্থতা জনিত কারণে দীর্ঘদিন হাটা চলা করা যাবে না এমন নিশ্চিত তথ্যে এ ওষুধ সেবন বন্ধ রাখতে হবে। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে লাভ ক্ষতির হিসাবকরে ডিসোজেসট্রেল ব্যবহার করতে হবে। থ্রোম্বোইম্বোলিক সমস্যা ও ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে সাবধানতার সাথে ডিসোজেসট্রেল ব্যবহার করতে হবে। ডিসোজেসট্রেল ব্যবহারে হাড়ের ঘনত্বের কি পরিবর্তন হয় তা জানা যায়নি।

মাত্রাধিক্যতা

অতিরিক্ত বা ওভার ডোজে মারাত্মক সমস্যার কথা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে বমিবমি ভাব, বমি, কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে যোনিপথে সামান্য রক্তপাত হতে পারে। উপসর্গ অনুযায়ী প্রয়োজনমত চিকিৎসা নিতে হবে।

থেরাপিউটিক ক্লাস

Oral Contraceptive preparations

সংরক্ষণ

সাধারণ কক্ষ তাপমাত্রায় (৩০°সেঃ এর নীচে) সংরক্ষণ করুন। প্যাকেটের গায়ে মুদ্রিত মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের পরে সেবন করা যাবে না।