মেথোট্রেক্সেট

নির্দেশনা

নিওপ্লাস্টিক রোগ:
  • গর্ভকালীন কোরিওকার্সিনোমা, কোরিওএডেনোমা ডেস্ট্রুয়েন্স এবং হাইডাটিডিফর্ম মোলের চিকিৎসায় নির্দেশিত
  • একিউট লিম্ফোব্লাসটিক লিউকিমিয়াতে নির্দেশিত
  • এডভ্যান্সড পর্যায়ের নন-হজকিনস লিম্ফোমাতে নির্দেশিত
  • স্তন ক্যান্সার, মাথা এবং গলার এপিডারময়েড ক্যান্সার, এডভ্যান্সড মাইকোসিস ফাংগয়েডিস এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে নির্দেশিত, বিশেষত স্কোয়ামাস সেল এবং ছোট কোষের প্রকারগুলির ক্ষেত্রে। 
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং পলিআর্টিকুলার জুভেনাইল রিউম্যাটয়েড আথ্রাইটিস: মেথোট্রেক্সেট গুরুতর, সক্রিয়, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, বা সক্রিয় পলিআর্টিকুলার কোর্স রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে নির্দেশিত যারা ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট (এনএসএআইডি) সহ প্রথম-লাইনের থেরাপির বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত সাড়া পেয়েছে।

সোরিয়াসিস: মেথোট্রেক্সেট গুরুতর সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নির্দেশিত, যারা অন্যান্য থেরাপির বিরুদ্ধে যথাযথভাবে সাড়া পায়নি।

ফার্মাকোলজি

মেথোট্রেক্সেট, ডাইহাইড্রোফলিক অ্যাসিড রিডাকটেস এনজাইমের কার্যকারীতা রোধ করার মাধ্যমে তার কার্যক্রম প্রকাশ করে। এই এনজাইমটি দ্বারা ডাইহাইড্রোফলেট টেট্রাহাইড্রফলেটে পরিণত হয়ে ডিএনএ তৈরির মূল উপাদান- পিউরিন নিউক্লিওটাইড এবং থাইমিডাইলেট সৃষ্টি করে। মেথোট্রেক্সেট যেহেতু এই ডিএনএ তৈরির প্রক্রিয়া রোধ করে, তার ফলশ্রুতিতে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হয়। সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে, ত্বকের সাধারণ কোষের তুলনায় ত্বকের এপিথেলিয়াল কোষগুলির উৎপত্তির হার অনেক বেড়ে যায়। এই উৎপত্তি হার নিয়ন্ত্রণের জন্য মেথোট্রেক্সেট ব্যবহৃত হয়।

মাত্রা ও সেবনবিধি

নিওপ্লাস্টিক রোগ-

কোরিওকার্সিনোমা এবং এরূপ ট্রোফোব্লাস্টিক রোগ: ১৫-৩০ মি.গ্রা. করে ৫ দিনের কোর্স প্রতিদিন মুখে বা ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে, কোর্সটি ১ বা এর বেশি সপ্তাহ ব্যবধানের পর ৩ থেকে ৫ বার প্রয়োজন অনুযায়ী পুনরায় নিতে হবে। যেহেতু হাইডাটিডিফর্ম মোল কোরিওকার্সিনোমার আগে হতে পারে, মেথোট্রেক্সেট প্রোফাইল্যাকটিক কেমোথেরাপির সাথে প্রয়োগ করা নির্দেশিত। কোরিওএডেনোমা ডেস্ট্রুয়েন্স হাইডাটিডিফর্ম মোলের ইনভেসিব রূপ হিসেবে ধরা হয়। এই সব রোগের ক্ষেত্রে মেথোট্রেক্সেট একই ডোজে দিতে হবে যেটি কোরিওকার্সিনোমার ক্ষেত্রে নির্দেশিত।

একিউট লিম্ফোব্লাসটিক লিউকিমিয়া:
  • ইন্ডাকশান ডোজ: ৩.৩ মি.গ্রা./মি. মেথোট্রেক্সেটের সাথে ৬০ মি.গ্রা./মি. প্রেডনিসন প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত
  • মেইনটিনেন্স ডোজ: সপ্তাহে ২ বার মোট সাপ্তাহিক ডোজ ৩০ মি.গ্রা./মি. মুখে বা ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশনের মাধ্যমে
  • বিকল্প মেইনটিনেন্স ডোজ: ২.৫ মি.গ্রা./কেজি ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রতি ১৪ দিন পর পর। যদি রিল্যাপ্স ঘটে, তবে পুনরায় প্রাথমিক ইন্ডাকশান ডোজ প্রয়োগ করতে হবে। 
লিম্ফোমা:
  • বুর্কিট টিউমার স্টেজ ১ থেকে ২: ১০-২৫ মি.গ্রা. দৈনিক একবার ৪-৮ দিন পর্যন্ত
  • বুর্কিট টিউমার স্টেজ ৩: মেথোট্রেক্সেট অন্যান্য অ্যান্টিটিউমার ড্রাগের সাথে সাধারনত দেওয়া হয়
  • থেরাপির সময়কাল: সবগুলো স্টেজে ৭-১০ দিনের বিশ্রামের পর কয়েকবার কোর্স পুনরায় নিতে হবে
  • লিম্ফোসারকোমা স্টেজ ৩: দৈনিক ০.৬২৫- ২.৫ মি.গ্রা./কেজি কম্বিনেশন কেমোথেরাপির অংশ হিসেবে নিতে হবে
মাইকোসিস ফাংগয়েডিস: প্রাথমিক স্টেজে ডোজিং: ৫-৫০ মি.গ্রা. সপ্তাহে ১ বার; অথবা যে সব রোগীর ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক থেরাপিতে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়নি তাদেরকে ১৫-৩৭.৫ মি.গ্রা. সপ্তাহে ২ বার দেওয়া যেতে পারে

স্তন ক্যান্সার: মেথোট্রেক্সেট ৪০ মি.গ্রা./মি. প্রথম এবং অষ্টম দিনে প্রতি ৪ সপ্তাহ পর পর সাইক্লোফসফামাইড এবং ফ্লুরোউরাসিলের কম্বিনেশনের সাথে ইন্ট্রাভেনাস ইনফিউশানের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে ৬-১২ সাইকেল পর্যন্ত।

মাথা এবং গলার ক্যান্সার: ৪০ মি.গ্রা./মি. প্রতি সপ্তাহে ইন্ট্রাভেনাস ইনফিউশানের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে (৩ সপ্তাহে মিলে ১ সাইকেল পূরণ হয়, কমপক্ষে ৬টি সাইকেল পূরণ করতে হবে)

রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস: ৭.৫ মি.গ্রা. সপ্তাহে একবার, সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক ডোজ: ২০ মি.গ্রা.

পলিআর্টিকুলার-কোর্স জুভেনাইল রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস: ১০ মি.গ্রা./মি. সপ্তাহে একবার

সোরিয়াসিস: ১০-২৫ মি.গ্রা. প্রতি সপ্তাহে একবার। সর্বোচ্চ ডোজ প্রতি সপ্তাহে ৩০ মি.গ্রা.।

ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া

  • এনএসএআইডি: হাই-ডোজ মেথোট্রেক্সেট ব্যবহারের আগে বা একই সাথে দেওয়া উচিত নয়, যেমন অস্টিওসারকোমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে
  • স্যালিসায়লেটস, ফিনাইলবুটাজোন, ফেনিটোইন এবং সালফোনামাইডস: বিষাক্ততা বৃদ্ধি পেতে পারে
  • পেনিসিলিন, থিওফায়লিন, প্রোবিনিসিড, এজাথিয়োপ্রিন, রেটিনয়েড, সালফাসেলাজিন: লিভারের বিষাক্ততার ঝুঁকি বৃদ্ধির জন্য রোগীকে পর্যবেক্ষন
    করা উচিত
  • সিসপ্ল্যাটিন: হাই-ডোজ মেথোট্রেক্সেট একই সাথে দেওয়া হলে সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক
  • মারকেপ্টোপিউরিন: মেথোট্রেক্সেট প্লাজমাতে মারকেপ্টোপিউরিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়
  • টেট্রাসাইক্লিন, ক্লোরামফেনিকল এবং ব্রড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক: অন্ত্রে মেথোট্রেক্সেটের শোষণ হ্রাস করতে পারে
  • ফলিক অ্যাসিড বা এর ডেরিভেটিভযুক্ত ভিটামিনের প্রস্তুতি: মেথোট্রেক্সেট এই ড্রাগগুলির রেস্পন্স কমিয়ে দেয়
  • ট্রাইমেথোপ্রিম/ সালফামেথক্সাজল: খুব কম ক্ষেত্রে অস্থি মজ্জার দমন বৃদ্ধি করে

প্রতিনির্দেশনা

  • মদ্যাশক্তি, অ্যালকোহলিক লিভার রোগ অথবা অন্য ক্রনিক লিভার রোগ
  • ইমিউনোডেফেশিয়েন্সি সিন্ড্রম
  • রক্তের অস্বাভাবিকতা যেমন অস্থি মজ্জার হাইপোপ্লাসিয়া, লিউকোপিনিয়া, থ্রোম্বোসাইটোপিনিয়া, অথবা গুরুতর এনিমিয়া
  • মেথোট্রেক্সেটের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা
  • সোরিয়াসিস বা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলা
  • সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা আছে যেসব মহিলাদের
  • মাতৃদুগ্ধদানকালীন মায়েদের
  • স্বামী-স্ত্রী যে কোনো একজনও যদি মেথোট্রেক্সেট সেবন করে থাকে তাহলে গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকতে হবে, পুরুষ রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে এবং সেটি বন্ধ হওয়ার কমপক্ষে ৩ মাস পর পর্যন্ত এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে এবং সেটি বন্ধ হওয়ার কমপক্ষে একটি ডিম্বাশয় চক্রের সময় পর্যন্ত গর্ভাবস্থা এড়ানো উচিত

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

  • আলসারেটিভ স্টোমাটাইটিস, লিউকোপিনিয়া, বমি বমি ভাব এবং পেট ব্যথা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি প্রায় দেখা যায়
  • অন্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি হচ্ছে অসুস্থতাবোধ, ক্লান্তি, কাঁপুনি এবং জ্বর, মাথা ঘোরা এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করার অক্ষমতা
  • মেথোট্রেক্সেট থেরাপি চলাকালীন সময়ে এবং বন্ধ করার পর অল্প সময়ের জন্য বন্ধ্যাত্ব, অলিগোস্পার্মিয়া এবং মাসিকের সমস্যা হতে পারে

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে

মেথোট্রেক্সেট US FDA প্রেগনেন্সি ক্যাটাগরি এক্স। নিওপ্লাস্টিক রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কেবল তখনই ব্যবহার করা উচিত যখন সম্ভাব্য সুবিধা ভ্রূণের ঝুঁকির বেশি হয়। মাতৃদুগ্ধদানকালীন মায়েদের ক্ষেত্রে মেথোট্রেক্সেট প্রতিনির্দেশিত।

সতর্কতা

  • প্রিজারভেটিভ যুক্ত মেথোট্রেক্সেটের ফর্মুলেশনগুলি ইন্ট্রাথ্যাকাল বা হাই-ডোজ মেথোট্রেক্সেট থেরাপির জন্য ব্যবহার করা যাবেনা
  • মেথোট্রেক্সেট সেবন করা রোগীদেরকে বিষাক্ত প্রভাবের পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন
  • পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ঔষধের পরিমাণ কমাতে বা বন্ধ করতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, যেমন লিউকোভরিন ক্যালসিয়াম ব্যবহার করা যেতে পারে
  • যদি মেথোট্রেক্সেট থেরাপি রিকনস্টিটিউট করা হয়, তবে সতর্কতার সাথে ঔষধের পরবর্তী ব্যবহার এবং সম্ভাব্য বিষাক্ত প্রভাবের পুনরাবৃত্তির জন্য বিবেচনা করতে হবে
  • ক্রমাগত লিভার পরীক্ষার অস্বাভাবিকতা এবং সিরাম অ্যালবুমিনের পরিমান কমে যাওয়া লিভারের গুরুতর বিষাক্ততার নির্দেশনা এবং সেটির পর্যবেক্ষন দরকার
  • ফোলেটের ঘাটতি: মেথোট্রেক্সেটের বিষাক্ততা বাড়িয়ে তুলতে পারে

বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার

শিশুদের ক্ষেত্রে: বিশেষত পেডিয়াট্রিক রোগী বা অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রে মেথোট্রেক্সেট আলাদা বা অন্যান্য ঔষুধের সাথে ব্যবহার করার আগে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিরুদ্ধে সুবিধার বিবেচনা করা উচিত

বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে: হেপাটিক, অস্থি মজ্জা এবং রেনাল বিষাক্ততার প্রাথমিক লক্ষণগুলির জন্য পর্যবেক্ষণ করা উচিত

মাত্রাধিক্যতা

মেথোট্রেক্সেটের অত্যাধিক মাত্রা নিবারণ করতে লিউকোভরিন নির্দেশিত এবং এটি যত দ্রূত সম্ভব প্রয়োগ করতে হবে।

থেরাপিউটিক ক্লাস

Antidote preparations, Immunosuppressant

সংরক্ষণ

শুষ্ক স্থানে অনধিক ৩০°সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করুন। আলো ও আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন।