মিসোপ্রোষ্টল

নির্দেশনা

মিসোপ্রোষ্টল নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে নির্দেশিত:
  • এনএসএআইডি সেবনকারী, যাদের গ্যাস্ট্রিক আলসার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে যেমন- বয়োবৃদ্ধ, শারীরিক ভাবে দূর্বল রোগী এবং যে সব রোগীর আলসার হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, তাদের গ্যান্ত্রিক এবং ডিওডেনাল আলসার প্রতিরোধে।
  • এনএসএআইডি জনিত পাকস্থলী ও ডিওডেনামের ক্ষয়ের নিরাময়ে
  • এনএসএআইডি থেরাপির অনুপস্থিতিতে যে গ্যাট্রিক ও ডিওডেনাল আলসার হয়, তার নিরাময়ে
  • প্রসবের সূচনাকল্পে
  • পোস্টপার্টাম হেমোরেজ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায়।

ফার্মাকোলজি

মিসোপ্রোষ্টল উচ্চমাত্রায় শোষিত হয় এবং দ্রুত ডি-এস্টারিফিকেশন-এর মাধ্যমে যুক্ত এসিডে পরিণত হয়, যা এর ক্লিনিক্যাল কার্যকারিতার জন্য দায়ী। মিসোপ্রোষ্টল এসিডের সর্বোচ্চ প্লাজমা ঘনত্ব কমে যায়, যদি মাত্রাটা খাদ্যের সাথে গ্রহণ করা হয় এবং এন্টাসিডের সাথে গ্রহণ করলে মিসোপ্রোষ্টল এসিডের মোট প্রাপ্যতা (রক্তে) হ্রাস পায়। মিসোপ্রোষ্টলের ক্ষরণবিরোধী (গ্যাস্ট্রিক এসিডের নিঃসরণ বন্ধ করে) এবং (প্রাণীতে) মিউকোসা রক্ষাকারী ভূমিকা আছে। এন.এস.এ.আই.ডি গুলো প্রোস্টাগ্লান্ডিন তৈরীতে বাধা দেয় এবং গ্যাস্ট্রিক মিউকোসার ভেতরে প্রোস্টাগ্লান্ডিনের অভাব বাইকার্বোনেট এবং মিউকাস-এর নিঃসরণ হ্রাস করে এবং মিউকোসার ক্ষয়ে অবদান রাখতে পারে। মিসোপ্রোষ্টল বাইকার্বোনেট এবং মিউকাস তৈরী বৃদ্ধি করে, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এই ক্রিয়াটি পরিলক্ষিত হয় মিসোপ্রোষ্টল ২০০ মাইক্রোগ্রাম বা তার বেশী ভোজে দিলে যা আবার ক্ষরণবিরোধী। তাই এটা বলা সম্ভব নয় যে, গ্যাস্ট্রিক আলসার কমাতে মিসোপ্রোষ্টলের যে ভূমিকা তা এর ক্ষরণবিরোধী ক্রিয়ার কারণে, মিউকাস রক্ষাকারী ভূমিকার কারণে বা উভয় কারণেই।

মাত্রা ও সেবনবিধি

মৃদু গাষ্ট্রিক ও ডিওডেনাল আলসার এবং এনএসএআইডি জনিত আলসারের ক্ষেত্রে: দৈনিক ৮০০ মাইক্রেগ্রাম (২-৪টি বিভক্ত মাত্রায়), সকালের নাস্তা অথবা প্রধান খাবারের পর এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে; চিকিৎসা কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ চালিয়ে যাওয়া উচিত এবং প্রয়োজন বোধে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত চালানো যেতে পারে।

এনএসএআইডি জনিত গাষ্ট্রিক ও ডিওডেনাল আলসার প্রতিরোধে: এনএসএআইডি-এর সাথে ২০০ মাইক্রোগ্রাম দৈনিক ২-৪ বার। যদি এই মাত্রা সহনীয় না হয়, তবে ১০০ মাইক্রোগ্রামের মাত্রা ব্যবহার করা যেতে পারে। এনএসএআইডি থেরাপির পুরো সময় জুড়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মিসোপ্রোষ্টল সেবন করা উচিত।

প্রসবের সূচনাকল্পে: ২৫ মাইক্রোগ্রাম ভেজাইনা এর পোস্টেরিওর ফরনিক্স এ স্থাপন করতে হবে। প্রয়োজন মতে এই মাত্রা ৬ ঘন্টা পরপর পুনরাবৃত্তি করা যাবে যতক্ষন না সর্বমোট সর্বোচ্চ ২০০ মাইক্রোগ্রামে পৌঁছায়। ফিটাল হার্টরেট এবং জরায়ুর সংকোচন অবশ্যই পর্যবেক্ষন করতে হবে। অথবা, ১০০ মাইক্রোগ্রাম মুখে সেব্য। যদি সারভাইকাল রাইপেনিং বা সক্রিয় প্রসব শুরু না হয়, তবে মুখে সেব্য মিসোপ্রোষ্টল ১০০-২০০ মাইক্রোগ্রাম ৪ ঘন্টা পর পর সেবন করতে হবে যতক্ষন না প্রসবের সূচনা হয় (যা বিশপ স্কোর ৭ বা এর বেশী দ্বারা প্রমাণিত)। সর্বোচ্চ ৬টি মাত্রা দেয়া যায়। মায়ের ভাইটাল সাইনসমূহ, ভ্রূণের হার্ট রেট এবং সংকোচন পর্যবেক্ষণ করা উচিত। মিসোপ্রোষ্টলের শেষ মাত্রার ৪ ঘন্টা পরে অক্সিটোসিন শুরু করা যেতে পারে। ফিটাল ডিসট্রেস এবং টিটানিক ইউটেরাইন সংকোচনের লক্ষণসমূহ সম্বন্ধে চিকিৎসককে অবহিত করা উচিত। চিকিৎসক দ্বারা মুখে সেব্য মিসোপ্রোষ্টল পর্যবেক্ষন করানো উচিত।

পোস্ট পার্টাম হিমোরেজ প্রতিরোধে: বাচ্চা প্রসবের পর পর তাৎক্ষনিক ৬০০ মাইক্রেগ্রাম মুখে সেব্য।

পোস্ট পার্টাম হিমোরেজ চিকিৎসায়: ৬০০ মাইক্রেগ্রাম মুখে সেব্য অথবা ১০০০ মাইক্রোগ্রাম পায়ু পথে।

ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া

মিসোপ্রোষ্টলের সাথে কার্ডিয়াক, পালমোনারী, সিএনএস-এর ওষুধ ও এনএসএআইডি-এর ক্লিনিক্যালি তাৎপর্যপূর্ণ ইন্টার‍্যাকশনের প্রমান পাওয়া যায়নি। উচ্চমাত্রার এন্টাসিডের সাথে সেবন করলে মিসোপ্রোষ্টলের বায়োএ্যভেইল্যাবিলিটি কমে যায়।

প্রতিনির্দেশনা

প্রোস্টাগ্ল্যানডিনের প্রতি অ্যালার্জির ইতিহাস রয়েছে, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে মিসোপ্রোষ্টল প্রতিনির্দেশিত এবং গর্ভাবস্থায়ও ইহা প্রতিনির্দেশিত।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

সাধারণত: মিসোপ্রোষ্টল সুসহনীয়। মিসোপ্রোষ্টল থেরাপিতে প্রায়শই ঘটে এমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াসমূহ হল পরিপাকতন্ত্র জনিত যেমন- ডায়ারিয়া, পেটে ব্যথা, বদহজম, পেট ফাঁপা, বমি ভাব, বমি, র‍্যাশ এবং মাথা ঝিম ঝিম করা। খাবারের পর এবং ঘুমানোর আগে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এবং ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত বা অন্যান্য ল্যাক্সাটিভ এন্টাসিডের সাথে একত্রে সেবন এড়িয়ে চলার মাধ্যমে ডায়ারিয়ার হার কমানো যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে মিসোপ্রোষ্টল প্রতিনির্দেশিত। গর্ভবতী হতে পারে এমন মহিলাদের ক্ষেত্রেও এটা ব্যবহার করা উচিত নয়, যদি না উক্ত রোগীর এন.এস.এ.আই.ডি থেরাপী প্রয়োজন হয় এবং অনুরূপ ওষুধজনিত গ্যাস্ট্রিক আলসারের উচ্চ ঝুঁকি থাকে। ঐরূপ রোগীর ক্ষেত্রে মিসোপ্রোষ্টল তখনই দেয়া যাবে যদি-
  • থেরাপী শুরুর ২ সপ্তাহ আগে রোগীর সিরাম গর্ভাবস্থা পরীক্ষা ঋণাত্মক হয়ে থাকে।
  • রোগী কার্যকর গর্ভনিরোধক পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে।
  • মিসোপ্রোষ্টল ব্যবহারের সমস্যা, এর ব্যবহারে গর্ভনিরোধ পদ্ধতির সম্ভাব্য ব্যর্থতার ঝুঁকি- এসব বিষয়ে মৌখিক ও লিখিত উভয় প্রকার সতর্কতা বাণী জেনে থাকলে।
  • রোগী পরবর্তী স্বাভাবিক রজাচক্রের ২য় বা ৩য় দিন মিসোপ্রোষ্টল থেরাপী শুরু করে।
মিসোপ্রোষ্টলের কার্যকর মেটাবোলাইট (মিসোপ্রোষ্টল এসিড) বুকের দুধের মাধ্যমে নিঃসৃত হওয়া সম্ভব কিনা এখনও গবেষণা করা হয়নি। নবজাতকদের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে বলে স্তন্যদায়ী মায়েদের ক্ষেত্রেপ্রযোজ্য নয়।

সতর্কতা

এনএসএআইডি জনিত গ্যাষ্ট্রিক ও ডিওডেনাল আলসারের প্রতিরোধে এবং চিকিৎসায়: গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে মিসোপ্রোষ্টল প্রতিনির্দেশিত এবং শিশু জন্মদানে সক্ষম মহিলাদের ক্ষেত্রে মিসোপ্রোষ্টল ব্যবহার করা উচিত নয় যদি না রোগীর এনএসএআইডি থেরাপির প্রয়োজন পড়ে। শিশু জন্মদানে সক্ষম মহিলাদের বলতে হবে যে মিসোপ্রোটল সেবন কালে তারা যেন অবশ্যই গর্ভধারণ না করেন এবং অবশ্যই একটি কার্যকরী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।

প্রসবের সূচনাকল্পে: সঠিক তারিখ নির্ধারণের মাধ্যমে গর্ভাবস্থার ৩৮ সপ্তাহ পূর্ণকরণ অথবা এল/এস >২.০ বা ধনাত্বক ফসফোটিডিল গ্লিসারণ পরীক্ষা দ্বারা ফুসফুসের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তি অথবা ৩৬ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পর মাতৃত্ব বা ভ্রূণজনিত কারণে প্রসবের সূচনাকল্পের নির্দেশনা থাকতে হবে। একিউট ফিটাল ডিসট্রেস, এ্যাবরাপশিও প্লাসেন্টা, প্লাসেন্টা প্রেভিয়া অথবা ব্যাখ্যাতীত ভ্যাজাইনাল রক্তস্রাব হলে প্রসবের সূচনাকরণ প্রতিনির্দেশিত। ভ্রূণ ভারটেক্স প্রেজেন্টেশন-এ থাকতে হবে।

বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার

শিশুদের ক্ষেত্রে: ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মিসোপ্রোষ্টলের কার্যকারীতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

মাত্রাধিক্যতা

মানবদেহে মিসোপ্রোেষ্টলের টক্সিক মাত্রা নির্ণিত হয়নি। মাত্রাধিক্যের ক্লিনিক্যাল লক্ষণসমূহ হচ্ছে ঘুম আসা, কাঁপুনি, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, পেটে ব্যথা, ডায়ারিয়া এবং জ্বর। সাপোর্টিভ ব্যবস্থা দ্বারা লক্ষণসমূহের চিকিৎসা করা উচিত।

থেরাপিউটিক ক্লাস

Drugs acting on the Uterus, Prostaglandin analogues

সংরক্ষণ

ঠান্ডা ও শুদ্ধ স্থানে রাখুন; আলো এবং আর্দ্রতা থেকে দূরে ও শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।