করোনাভাইরাস: ভারত থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা আনতে চুক্তি

18 Nov, 2020
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার।


স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক বলেছেন, এই টিকা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কেনা হবে। সরবরাহ খরচসহ প্রতি ডোজের দাম পড়বে ৫ মার্কিন ডলার।

এই টিকা বিতরণ করা হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ যারা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছেন, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে টিকার আওয়তায় আনার ব্যবস্থা করা হবে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই করোনাভাইরাস টিকা এখন পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ বছরই তার চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্ভাব্য এ টিকার পরীক্ষা ও উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ভারতেও এসএআরসি-সিওভি-২ এজেডডি ১২২ নামের ওই টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে।

এই টিকার ১০০ কোটির বেশি ডোজ উৎপাদন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরবরাহের জন্য অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং গেটস ফাউন্ডেশন ও গ্যাভির সঙ্গে আংশীদারিত্ব চুক্তি রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউটের।

আর ভারত থেকে টিকা এনে বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য গত অগাস্টে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে দেশের ওষুধ খাতের শীর্ষ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।

সেই চুক্তি অনুযায়ী, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’। এখন বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারত থেকে ওই টিকা কেনার জন্য সমঝোতায় পৌঁছালো বাংলাদেশ সরকার।

তবে আনার আগে এই টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেতে হবে বলে সমঝোতা স্মারকে উল্লখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সরকারের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল, সেরাম ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক সন্দ্বীপ মলয় এবং বেক্সিমকোর চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক ছাড়াও ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা খুবই আননন্দিত যে দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষা আমাদের শেষ হচ্ছে। অনেক জল্পনা-কল্পনা ছিল বাংলাদেশ কোন জায়গা থেকে আনবে কখন আনবে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হয়েছে।

“তিন কোটি ডোজ টিকা দেবে। যখনই এটা তৈরি হবে, তখনই বাংলাদেশকে প্রথম সুবিধামত সময়ে দেবে। বেক্সিমকো এই ভ্যাকসিন আনার ব্যবস্থা নেবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ডিপোতে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।”

তিনি জানান, প্রত্যেকের জন্য দুটি করে ডোজ লাগবে। অর্থাৎ তিন কোটি ডোজ টিকা আনলে দেড় কোটি মানুষকে তা দেওয়া যাবে।

“একটি ডোজের ২৮ দিন পর আরেকটি ডোজ দিতে হবে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ডোজ দিতে পারবে বলে তারা জানিয়েছে। এখানে স্টোরেজের ব্যবস্থা উনারাও করবে, আমরাও করব।”

আগামী ফেব্রুয়ারিতে এই টিকা আসতে পারে বলে ধারণা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, যদিও পরীক্ষা ও অনুমোদনের পর্ব এখনও শেষ হয়নি।

তিনি জানান, বেক্সিমকো ভারতে থেকে টিকা এনে সরকারকে পৌঁছে দেবে। যারা ব্যক্তিগতভাবে সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে বেক্সিমকোর মাধ্যমে টিকা নেবে, সেই দাম আলাদা হবে।

“আমরা মনে করি এই ভ্যাকসিনটি নিরাপদ হবে। বিভিন্ন দেশে ট্রায়াল হয়েছে, কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আমাদের তাড়াতাড়ি পাওয়াটাও একটা বিরাট বিষয়, এটা আমরা পাব।

মন্ত্রী বলেন, “জনসংখ্যার দিকে আমরা ছয় নম্বরে আছি, কিন্তু করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হারের দিক থেকে আমরা ৩১ নম্বরে, অনেক পেছনে আছি। আমাদের সুস্থতার হারও ভালো।”

নিরাপদ থাকার জন্য সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করার, সামাজিক দুরত্বের নিয়ম মেনে চলার এবং নিজ নিজ পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার তাগিদ দেন জাহেদ মালেক। 

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মান্নান বলেন, “কোভিডের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ১৬৬টি কোম্পানি কাজ করছে। এর মধ্যে ২৮টি কোম্পানি হিউম্যান ট্রায়াল স্টেজে গেছে। মাত্র নয়টি কোম্পানি থার্ড ট্রায়াল করতে ক্যাপাবিলিটি ডেভলপ করেছে।

“ভ্যাকসিন গবেষণা এবং উৎপাদনকারী ছয়টি কোম্পানির সাথে বাংলাদেশ শুরু থেকে যেগাযোগ করছে। এরমধ্যে সবচেয়ে আশার আলো নিয়ে এসেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিন। মানবদেহে সাফল্যজনক প্রয়োগ হওয়ায় আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি।”

তিনি বলেন, “আমরা দ্রুত সময়ে ভ্যাকসিন পাব বলে আভাস পাচ্ছি এবং কাছাকাছি চলে যাচ্ছি। এই চুক্তির ফলে সারা দেশের ১৮ কোটি মানুষ আশার আলো দেখবে এবং আশ্বস্ত হবে যে বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন...।”

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাংসদ নাজমুল হাসান বলেন, “সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যোগসূত্রটা আমরা করে দিয়েছি। যখনই বাজারে আসবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন পাওয়া যাবে, তখনই নিয়ে আসা হবে। সবচেয়ে কম দামে তারা আমাদের ভ্যাকসিন দেবে।”


Source: bdnews24.com
Thanks for using MedEx!
How would you rate your experience so far?