ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ আবিষ্কারের দাবি
25 Mar, 2022
সারা বিশ্বে বর্তমানে ৪৬ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশে আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৮৬ লাখের বেশি। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আরও একটি নতুন কারণ খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের একদল বিজ্ঞানী। তাঁরা বলছেন, ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপরের অংশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ একটি জারক রস কমে গেলে এ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এ জারক রস বা এনজাইমের নাম ইন্টেস্টাইনাল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস, সংক্ষেপে আইএপি। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের শরীরে আইএপির পরিমাণ কমে যায় তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার এ মূল কারণ আবিষ্কারের দাবি করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মধু এস মালো ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে একদল গবেষক।
গতকাল রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্র তুলে ধরেন অধ্যাপক মধু এস মালো। মানবদেহের অন্ত্রে থাকা মৃত ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরের অংশ টক্সিন (এন্ডোটক্সিন) হিসেবে কাজ করে। এ টক্সিন সাধারণত মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ফ্রুকটোজ বা অ্যালকোহল টক্সিনে রক্তে ঢুকতে সহায়তা করে। এর ফলে নিম্ন গ্রেডের সিস্টেমিক প্রদাহের সৃষ্টি হয়। যার ফলে ডায়াবেটিস হতে পারে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পাঁচ বছর ধরে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫৭৪ জন সুস্থ লোকের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। মধু এস মালো জানান, মানবদেহের অন্ত্রে থাকা ইন্টেস্টিনাইল আলকালাইন ফসফাটেস নামক এনজাইম এ টক্সিনকে ধ্বংস করে দেয়।
এ এনজাইমের ঘাটতি হলে অন্ত্রে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হয়। এ টক্সিন রক্তে ঢুকে সিস্টেমিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিস হতে পারে তেমনি ইসকেমিক হার্ট ডিজিজও হতে পারে (কেননা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজেরও অন্যতম কারণ সিস্টেমিক প্রদাহ)। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো আইএপি লেভেল কমে যাওয়া। এ ছাড়া মুটিয়ে যাওয়া, শারীরিক অ্যাকটিভিটি কমে যাওয়া, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হওয়া অন্যতম। দেশে ১৫ শতাংশ ডায়াবেটিস হয় জেনেটিক কারণে। যেগুলো রোধে আমাদের কিছুই করার নেই। তবে বাকি ৮৫ শতাংশই আইএপি-সংক্রান্ত কারণে হয়। গবেষণায় দেখা যায়, যাদের শরীরে এ এনজাইম বেশি থাকে তাদের তুলনায় যাদের কম থাকে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার হার ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেশি। অল্পবয়সী যাদের অন্ত্রে এ এনজাইমটি দ্রুত কমতে থাকে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যাদের অন্ত্রে এ এনজাইমটি কম ছিল এবং পরে বেড়েছে তাদের ডায়াবেটিস হয়নি। এনজাইমটি যাদের অন্ত্রে কম ছিল তাদের ফাস্টিং সুগার বৃদ্ধির মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। এনজাইমের মাত্রা বেশি হলে স্থূল ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হয় না।
গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, যাদের দেহে এ এনজাইমের পরিমাণ কম তাদের এনজাইম খাওয়ানো সম্ভব হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে গবেষকরা এনজাইমটি তৈরির চেষ্টা করছেন। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ও আমেরিকান ডায়াবেটিস সমিতির যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত জার্নাল ‘দ্য বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ার’-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি বারডেমের অধ্যাপক ফারুক পাঠান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক সালিমুর রহমান ও অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসানাত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালেকুল ইসলামের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে। গবেষণায় আরও সহযোগিতা করেছেন বাডাসের জগন্নাথ মালো, মো. মেহেদী হাসান রকি, জিনোক বর্মন, শামেমা আক্তার তিন্নি, স্বপন কে বর্মন, তাপস সরকার, বারডেমের ড. মো. আবদুল মোত্তালিব ও মো. নাঈমুল ইসলাম খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কনকরাজু কালিযান্নান।
Source: bd-pratidin.com
এ জারক রস বা এনজাইমের নাম ইন্টেস্টাইনাল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস, সংক্ষেপে আইএপি। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের শরীরে আইএপির পরিমাণ কমে যায় তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার এ মূল কারণ আবিষ্কারের দাবি করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মধু এস মালো ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে একদল গবেষক।
গতকাল রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্র তুলে ধরেন অধ্যাপক মধু এস মালো। মানবদেহের অন্ত্রে থাকা মৃত ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরের অংশ টক্সিন (এন্ডোটক্সিন) হিসেবে কাজ করে। এ টক্সিন সাধারণত মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ফ্রুকটোজ বা অ্যালকোহল টক্সিনে রক্তে ঢুকতে সহায়তা করে। এর ফলে নিম্ন গ্রেডের সিস্টেমিক প্রদাহের সৃষ্টি হয়। যার ফলে ডায়াবেটিস হতে পারে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পাঁচ বছর ধরে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫৭৪ জন সুস্থ লোকের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। মধু এস মালো জানান, মানবদেহের অন্ত্রে থাকা ইন্টেস্টিনাইল আলকালাইন ফসফাটেস নামক এনজাইম এ টক্সিনকে ধ্বংস করে দেয়।
এ এনজাইমের ঘাটতি হলে অন্ত্রে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হয়। এ টক্সিন রক্তে ঢুকে সিস্টেমিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিস হতে পারে তেমনি ইসকেমিক হার্ট ডিজিজও হতে পারে (কেননা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজেরও অন্যতম কারণ সিস্টেমিক প্রদাহ)। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো আইএপি লেভেল কমে যাওয়া। এ ছাড়া মুটিয়ে যাওয়া, শারীরিক অ্যাকটিভিটি কমে যাওয়া, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হওয়া অন্যতম। দেশে ১৫ শতাংশ ডায়াবেটিস হয় জেনেটিক কারণে। যেগুলো রোধে আমাদের কিছুই করার নেই। তবে বাকি ৮৫ শতাংশই আইএপি-সংক্রান্ত কারণে হয়। গবেষণায় দেখা যায়, যাদের শরীরে এ এনজাইম বেশি থাকে তাদের তুলনায় যাদের কম থাকে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার হার ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেশি। অল্পবয়সী যাদের অন্ত্রে এ এনজাইমটি দ্রুত কমতে থাকে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যাদের অন্ত্রে এ এনজাইমটি কম ছিল এবং পরে বেড়েছে তাদের ডায়াবেটিস হয়নি। এনজাইমটি যাদের অন্ত্রে কম ছিল তাদের ফাস্টিং সুগার বৃদ্ধির মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। এনজাইমের মাত্রা বেশি হলে স্থূল ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হয় না।
গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, যাদের দেহে এ এনজাইমের পরিমাণ কম তাদের এনজাইম খাওয়ানো সম্ভব হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে গবেষকরা এনজাইমটি তৈরির চেষ্টা করছেন। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ও আমেরিকান ডায়াবেটিস সমিতির যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত জার্নাল ‘দ্য বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ার’-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি বারডেমের অধ্যাপক ফারুক পাঠান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক সালিমুর রহমান ও অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসানাত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালেকুল ইসলামের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে। গবেষণায় আরও সহযোগিতা করেছেন বাডাসের জগন্নাথ মালো, মো. মেহেদী হাসান রকি, জিনোক বর্মন, শামেমা আক্তার তিন্নি, স্বপন কে বর্মন, তাপস সরকার, বারডেমের ড. মো. আবদুল মোত্তালিব ও মো. নাঈমুল ইসলাম খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কনকরাজু কালিযান্নান।
Source: bd-pratidin.com