নির্দেশনা

গ্লিক্লাজাইড একটি ওষুধ যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় (সালফোনাইল ইউরিয়া গোত্রের মুখে খাওয়ার ডায়াবেটিক ওষুধ)। একটি বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস (টাইপ ২ ডায়াবেটিস মেলিটাস) হলে প্রাপ্ত বয়স্কদের গ্লিক্লাজাইড খেতে হয়, যখন সুষম খাবার, ব্যায়াম ও ওজন কমানোর মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের পরিমান সঠিক মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।

ফার্মাকোলজি

গ্লিক্লাজাইড ট্যাবলেট একটি দ্বিতীয় প্রজন্মের সালফোনাইল ইউরিয়া যার হাইপোগ্লাইসেমিক ও হিমোবায়োলজিক্যাল ধর্ম আছে। ইহা প্যানক্রিয়াটিক বিটাসেল মেমব্রন এর মধ্যে দিয়ে ক্যালসিয়াম আয়ণ পরিবহন বৃদ্ধির মাধ্যমে ইনসুলিন নিঃসরণকে উদ্দীপ্ত করে ও যকৃত হতে গ্লুকোজ নিঃসরণ কমায়।

মাত্রা ও সেবনবিধি

ফিল্ম কোটেড ট্যাবলেট: প্রারম্ভিক মাত্রা দৈনিক ৪০-৮০ মি.গ্রা.। প্রয়োজনে দৈনিক ৩২০ মি.গ্রা. পর্যন্ত বৃদ্ধি করে বিভক্ত মাত্রায় দেয়া যেতে পারে। গ্লিক্লাজাইড ট্যাবলেট অবশ্যই খাবার গ্রহনের পূর্বে খাওয়া উচিত। শিশুদের জুভেনাইল অনসেট ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে গ্লিক্লাজাইড নির্দেশিত নয়।

মডিফাইড রিলিজ প্রিপারেশন
: সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্লিক্লাজাইড এমআর খাবেন। আপনি নিশ্চিত না হলে ডাক্তারের সাথে আলাপ করে নিন। ডাক্তার আপনার রক্তে ও মূত্রে শর্করার পরিমান দেখে ওষুধের পরিমান ঠিক করবেন। বাহ্যিক পরিবর্তন (ওজন হ্রাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, মানসিক চাপ হ্রাস) অথবা শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণ এর কারণে গ্লিক্লাজাইডের পরিমান পরিবর্তন করতে হতে পারে। সাধারণত সকালে নাস্তার সাথে এক থেকে চারটা (১২০ মি. গ্রা.) পর্যন্ত ট্যাবলেট একবারে খেতে হয়। পরিমান নির্ভর করে চিকিৎসার সাড়া অনুযায়ী।

গ্লিক্লাজাইড মুখ খাওয়ার ওষুধ। সকালে নাস্তার সময় (প্রতিদিন একই সময়) পানি দিয়ে ওষুধ খেতে হবে। আস্ত ট্যাবলেট একবারে গিলে খেয়ে ফেলতে হবে, চাবানো বা চোষা যাবে না। ওষুধ খাবার পর অবশ্যই কিছু খেতে হবে।

গ্লিক্লাজাইড এমআর মেটফরমিন, আলফা গ্লুকোসাইডেজ ইনহিবিটর, থায়াজোলিডিনডাইওন, ডাইপেপটাইডিল পেপটাইডেজ- ৪ ইনহিবিটর, জিএলপি-১ রিসেপ্টর এগোনিস্ট অথবা ইনসুলিনের সাথে দেয়া হলে ডাক্তার আপনার জন্য প্রতিটি ওষুধের সঠিক পরিমান নির্দিষ্ট করে দিবেন।

আপনার ডাক্তার অথবা ফার্মাসিস্টের সাথে কথা বলুন, যদি আপনার মনে হয় গ্লিক্লাজাইড এমআর খাবার পরেও আপনার শর্করার মাত্রা উচ্চ থাকে।

যদি আপনি প্রয়োজনের বেশি গ্লিক্লাজাইড এমআর ট্যাবলেট গ্রহণ করেন: আপনি বেশি ওষুধ খেয়ে ফেললে ডাক্তারের সাথে অথবা নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যোগাযোগ করুন। চিনির শরবত (৪ থেকে ৬ চামচ) পান করে, তারপর নাস্তা খেয়ে লক্ষণ দূর করা যেতে পারে। রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়লে সাথে সাথে ডাক্তারকে অথবা জরুরী বিভাগে খবর দিতে হবে। একই কাজ করতে হবে যদি অন্য কেউ (শিশু) ওষুধ খেয়ে ফেলে। অজ্ঞান রোগীকে খাবার বা পানীয় দেয়া যাবেনা। জরুরী মূহুর্তে ডাক্তার ডাকার জন্য কাউকে থাকতে হবে।

গ্লিক্লাজাইড এমআর ট্যাবলেট খেতে ভুলে গেলে: ভাল ফল পাবার জন্য প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ওষুধ খাওয়া উচিত। তারপরেও গ্লিক্লাজাইড এমআর ট্যাবলেট খেতে ভুলে গেলে পরবর্তী দিন স্বাভাবিক পরিমান খেতে হবে। ক্ষতি পূরণের জন্য দ্বিগুন খাওয়া যাবেনা।

যদি গ্লিক্লাজাইড এমআর খাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়: ডায়াবেটিসের চিকিৎসা সারাজীবন নিতে হয়। তারপরও ওষুধ বন্ধ করতে চাইলে ডাক্তারের সাথে আলাপ করতে হবে। ওষুধ বন্ধ করলে রক্তে শকর্রার মাত্রা বেড়ে যেতে (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) পারে। আর কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে ডাক্তার অথবা ফার্মাসিস্টের সাথে আলাপ করতে হবে।

ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া

অন্যান্য ওষুধ ও গ্লিক্লাজাইড ট্যাবলেট:

আপনি অন্য কোনো ওষুধ খেয়ে থাকলে আপনার ডাক্তার অথবা ফার্মাসিস্টকে বলুন, কেননা গ্লিক্লাজাইড এর সাথে অন্য ওষুধের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। নিম্নোক্ত ওষুধ সমূহ গ্লিক্লাজাইড এমআর এর রক্তে শর্করার পরিমান কমানোর মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে:
  • রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর অন্য ওষুধ সেবন করলে (মুখে খাওয়া ওষুধ, জিএলপি-১ রিসেপ্টর এগোনিস্ট অথবা ইনসুলিন)
  • অ্যান্টিবায়োটিকস (সালফোনামাইড, ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন)
  • উচ্চ রক্তচাপ অথবা হার্টফেল এর ওষুধ (বিটা ব্লকার, এসিই-ইনহিবিটর, ক্যাপটোপ্রিল, এনালাপ্রিল)
  • ফাংগাল ইনফেকশনের ওষুধ (মাইকোনাজল, ফ্লুকোনাজল)
  • পাকস্থলী অথবা অন্ত্রে আলসার নিরাময়ের ওষুধ (এইচ-রিসেপ্টর এন্টাগনিস্ট)
  • অবসাদ দূর করার ওষুধ (মনোঅ্যামিন অক্সাইডেজ ইনহিবিটর)
  • ব্যথা নাশক অথবা বাতজ্বরের ওষুধ (ফিনাইলবিউটাজন, আইবুপ্রোফেন)
  • অ্যালকোহল মিশ্রিত ওষুধ
নিম্নোক্ত ওষুধ সমূহ গ্লিক্লাজাইডের রক্তে শর্করার পরিমান কমানোর মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে:
  • কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ (ক্লোরপ্রোমাজিন)
  • ক্ষত নিরাময়ের ওষুধ (করটিকোস্টেরয়েডস)
  • হাঁপানি চিকিৎসা ও প্রসবের সময় ব্যবহৃত ওষুধ (ইন্ট্রাভেনাস সালবিউটামল, রিটোড্রাইন, টারবিউটালাইন)
  • স্তনে সমস্যা, মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ এবং এণ্ডোমেট্রিওসিস এর জন্য ব্যবহৃত ওষুধ (ডানাজল)
  • সেন্ট জনস্ ওয়ার্ট-হাইপেরিকাম পারফোরাটাম জাতীয় ওষুধ
  • ফ্লুরোকুইনোলোন জাতীয় এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে, গ্লিক্লাজাইড এমআর রক্তে গ্লুকোজের পরিমান অনিয়মিত (কম বা বেশি) করতে পারে।
গ্লিক্লাজাইড রক্ত জমাট বাঁধা নিরোধক ওষুধের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় (ওয়ারফেরিন)।

অন্য যে কোনো ওষুধ খাবার পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন। হাসপাতালে ভর্তি হলে তাদের জানান যে আপনি গ্লিক্লাজাইড এমআর খান।

খাবার ও পানীয় এর সাথে গ্লিক্লাজাইড ট্যাবলেট সেবন: খাবার ও নন-অ্যালকোহলিক পানীয়র সাথে গ্লিক্লাজাইড এমআর খাওয়া যায়।

গাড়ি ও যন্ত্র চালনা: শর্করার পরিমান রক্তে খুব বেশি কমে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বা বেড়ে গেলে (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) বা ডায়াবেটিসের কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে আপনার মনোসংযোগ বাধাগ্রস্থ হতে পারে। তাই আপনি আপনার নিজের ও অন্যের বিপদের কারণ হতে পারেন।

দয়াকরে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন আপনি গাড়ি চালাতে পারবেন কিনা যদি:
  • প্রায়ই রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)
  • আর রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাবার লক্ষণ প্রায়ই পরিলক্ষিত না হয়
গ্লিক্লাজাইড এ আছে ল্যাকটোজ। যদি ডাক্তার বলে থাকেন আপনি কোনো কোনো শর্করা সহ্য করতে পারবেন না, তবে এ ওষুধ খাবার আগে ডাক্তারকে বলুন।

প্রতিনির্দেশনা

নিম্নবর্ণিত অবস্থায় গ্লিক্লাজাইড ব্যবহার করা যাবে না -
  • যদি আপনার এলার্জি থাকে গ্লিক্লাজাইড অথবা অন্য কোনো ওষুধে (হাইপোগ্লাইসেমিক সালফোনামাইড)
  • যদি আপনার ইনসুলিন নির্ভর (টাইপ ১) ডায়াবেটিস হয়
  • যদি আপনার প্রস্রাবে কিটোন উপাদান এবং শর্করা পাওয়া যায় (তার মানে আপনার ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস হয়েছে), ডায়াবেটিক প্রি-কোমা, কোমা থাকে
  • যদি আপনার লিভার ও কিডনীতে মারাত্মক জটিলতা থাকে
  • যদি আপনি মাইকোনাজল ব্যবহার করেন
  • যদি আপনি স্তন্যদান করেন

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

অন্যান্য সকল ওষুধের মত গ্লিক্লাজাইড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। সবচেয়ে বেশি হতে পারে রক্তে শর্করা কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)। যদি চিকিৎসা না দেয়া হয় তবে তা ঝিমুনি, অচেতনতা অথবা কোমায় পরিণত হতে পারে। যদি অনেক দীর্ঘ সময় রক্তে শর্করার কমতি থাকে তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার পরেও ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত।

লিভার সমস্যা: বিক্ষিপ্ত দুই একটি ক্ষেত্রে সমস্যা পাওয়া গিয়েছে। যদি চামড়া চোখ হলদে হয়ে যায় তবে সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ওষুধ বন্ধ করলে এ উপসর্গ চলে যাবে। সেক্ষেত্রে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নিবেন ওষুধ বন্ধ হবে কিনা।

চামড়া সংক্রমণ: চামড়া শুষ্ক, রুক্ষ, খসখসে লাল হয়ে যাওয়া, এনজিওইডিমা (চোখের পাতা, মুখমণ্ডল, ঠোঁট, মুখ, জিহবা এবং ঘাড়ের টিস্যু দ্রুত ফুলে গিয়ে শ্বাসের সমস্যা হওয়া) ও চুলকানি হতে পারে।

রক্তে সমস্যা: রক্তের উপাদান (অনুচক্রিকা, লোহিত কনিকা, শ্বেত রক্ত কনিকা) কমে যেতে পারে। যার ফলে চেহারা ফ্যাকাসে হতে পারে, রক্ত ক্ষরন হতে পারে, গুটি ওঠা অথবা জ্বর হতে পারে, ওষুধ বন্ধ করলে এটা ঠিক হয়ে যাবে।

হজমে সমস্যা: পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, বদ হজম, ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। খাবারের সাথে ওষুধ খেলে এই সমস্যা কমে যায়।

চোখ সংক্রমণ: চিকিৎসার শুরুতে দৃষ্টি শক্তিতে সমস্যা হতে পারে। রক্তে শর্করার পরিমান পরিবর্তনের কারনে এমন হতে পারে।

সালফোনাইল ইউরিয়া ব্যবহারে রক্তে উপাদান সমূহের পরিমান পরিবর্তন অথবা অতি সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে। সালফোনাইল ইউরিয়া খাওয়া বন্ধ করলে লিভার সমস্যা (জন্ডিস), রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া (হাইপোন্যাট্রিমিয়া) দূর হয়ে যাবার কথা। তবে বিক্ষিপ্ত দুই একটি ক্ষেত্রে মারাত্মক লিভার জটিলতা হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে

গ্লিক্লাজাইড গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায় না। আপনি গর্ভধারন করতে চাইলে অথবা গর্ভবতী হয়ে পড়লে আপনার ডাক্তারকে জানান। স্তন্যদানকালেও গ্লিক্লাজাইড খাওয়া যায় না।

সতর্কতা

গ্লিক্লাজাইড খাবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক ভাবে বজায় রাখার জন্য আপনার ডাক্তার এর পরামর্শ মেনে চলুন। এর মানে হলো নিয়মিত ওষুধ খাওয়া ছাড়াও সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, ব্যায়াম করুন ও প্রয়োজন অনুসারে ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।

গ্লিক্লাজাইড চিকিৎসায় নিয়মিত রক্তে (সম্ভব হলে প্রস্রাবে) শর্করার মাত্রা দেখুন এবং হিমোগ্লোবিন-এ-ওয়ান-সি দেখুন।

চিকিৎসার প্রথম কয়েক সপ্তাহে রক্তে শর্করার পরিমান কমে যাবার প্রবণতা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বেড়ে যায়, সুতরাং নিয়মিত ডাক্তারী পরীক্ষা করা জরুরী।

রক্তে শর্করার পরিমান কমে যেতে পারে:
  • যদি আপনি অনিয়মিত ভাবে খাবার খান অথবা একে বারেই না খান
  • যদি আপনি রোযা বা উপবাস পালন করেন
  • যদি আপনি অপুষ্টিতে ভোগেন
  • যদি আপনি আপনার খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করেন
  • যদি আপনি শর্করা গ্রহণের সাথে সামঞ্জস্য না রেখে শারীরিক পরিশ্রম বাড়িয়ে দেন।
  • যদি আপনি মদ (অ্যালকোহল) পান করেন
  • যদি আপনি একই সাথে অন্য ওষুধ বা কোন ভেষজ উপাদান সেবন করেন
  • যদি আপনি গ্লিক্লাজাইডের খুব উচ্চ মাত্রা সেবন করেন
  • যদি আপনার হরমোন জনিত কোন সমস্যা থাকে (থাইরয়েড গ্রন্থি, পিটুইটারি গ্রন্থি অথবা এড্রেনালিন করটেক্স গ্রন্থিতে)
  • যদি আপনার লিভার ও কিডনীতে মারাত্মক জটিলতা থাকে।
আপনার রক্তে শর্করার পরিমান কমে গেলে নিম্নোক্ত উপসর্গ সমূহ দেখা দিতে পারে: মাথা ব্যথা, ক্ষুধা, বমি বমি ভাব, বমি, উৎকণ্ঠা, অনিদ্রা, অস্থিরতা, অস্বাভাবিক আচরণ, অমনোযোগিতা, সচেতনতা হ্রাস, বিষন্নতা, বিব্রতবোধ, বাকশক্তি অথবা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, কাঁপুনি, অনুভূতি হ্রাস, ঝিমুনি এবং অসহায় বোধ।

নিম্নোক্ত লক্ষণগুলিও দেখা দিতে পারে: ঘাম হওয়া, ফ্যাকাসে ভাব, হঠাৎ প্রচণ্ড বুকে ব্যথা যা আস্তে আস্তে পার্শ্ববর্তী স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে (এনজাইনা পেকটরিস)।

রক্তে শর্করার পরিমান যদি ক্রমাগত কমতে থাকে আপনি অবসাদগ্রস্থ হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারেন। আপনার নিঃশ্বাস অগভীর হয়ে পড়তে পারে এবং হৃদস্পন্দন কমে আপনি অচেতন হয়ে পড়তে পারেন।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রক্তে শর্করার পরিমান কমে যাবার লক্ষণ ঠিক হয়ে যায় যদি আপনি দ্রুত মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য খেতে পারেন গ্লুকোজ ট্যাবলেট, চিনির কিউব, মিষ্টি ফলের রস, মিষ্টি চা।

তাই আপনি সব সময় সাথে কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার রাখতে পারেন (গ্লুকোজ ট্যাবলেট, চিনির কিউব)। মনে রাখতে হবে কৃত্রিম চিনি কার্যকরী নয়। মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার পরেও লক্ষণ বজায় থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন অথবা নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।

রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলেও লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে, যখন শর্করার মাত্রা কমতে থাকবে আপনি টের নাও পেতে পারেন। এটা তখনই হয় যদি আপনি একজন বয়স্ক ব্যক্তি হন ও কিছু নির্দিষ্ট গোত্রের ওষুধ সেবন করেন (যে ওষুধ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে কাজ করে অথবা বিটাব্লকারসমূহ)।

আপনি যদি চাপের ভিতর থাকেন (যেমন- কোন দুর্ঘটনা, অপারেশন, জ্বর ইত্যাদি), ডাক্তার আপনাকে সাময়িকভাবে ইনসুলিন দিতে পারেন।

যদি গ্লিক্লাজাইড রক্তে শর্করার পরিমান কমাতে না পারে তাহলে রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে গিয়ে হাইপারগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। যদি আপনি ডাক্তারের পরামর্শ মেনে না চলেন অথবা মানসিক চাপে থাকেন তাহলে এমন হতে পারে। সেক্ষেত্রে বার বার পানির পিপাসা লাগা, বার বার প্রস্রাব হওয়া, চামড়া শুকিয়ে যাওয়া, চামড়া চুলকানো অথবা চামড়ায় ক্ষত হতে পারে। এই লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তার অথবা ফার্মাসিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন।

আপনার যদি বংশগত ভাবে গ্লুকোজ-৬-ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেজ এর অভাব থাকে, হিমোগ্লোবিন কমে যাবার এবং লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙে যাবার প্রবণতা থাকে তবে এ ওষুধ খাবার আগে ডাক্তারের সাথে আলাপ করে নিন। যাদের পোরফাইরিয়া রয়েছে (ইনহেরিটেড জেনেটিক ডিজঅর্ডার যেটা শরীরে পোরফাইরিন বা পোরফাইরিন প্রিকারসর জমা হওয়ার কারনে হয়), তাদের ক্ষেত্রে তীব্র পোরফাইরিয়া হতে পারে কিছু সালফোনাইল ইউরিয়া ওষুধের সাথে।

গ্লিক্লাজাইড শিশুদের জন্য প্রযোজ্য নয় ৷

মাত্রাধিক্যতা

দুর্ঘটনাজনিত অতিমাত্রার ক্ষেত্রে প্রথমে গ্যাস্ট্রিক ল্যাভেজ দিতে হবে সাথে সাথে হাইপোগ্লাইসেমিয়াও সংশোধন করতে হবে। অতি জটিল ক্ষেত্রে অনতিবিলম্বে ৫% গ্লুকোজ দ্রবন শিরায় দিতে হবে সাথে রক্তের গ্লুকোজ ও পটাশিয়ামের মাত্রাও পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

থেরাপিউটিক ক্লাস

Sulfonylureas

সংরক্ষণ

শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। প্যাকেটের গায়ে উল্লেখিত মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ পার হয়ে গেলে গ্লিক্লাজাইড খাবেন না। মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দ্বারা ওই মাসের শেষদিন পর্যন্ত বোঝায়। ৩০°সে. তাপমাত্রার নিচে সংরক্ষণ করুন। ওষুধপত্র গৃহস্থালির বর্জ্যে বা বর্জ্য পানিতে ফেলবেন না। ওষুধ আর প্রয়োজন না হলে কিভাবে নষ্ট করতে হবে তা আপনার ফার্মাসিস্টকে জিজ্ঞাসা করুন।

রাসায়নিক গঠন

Molecular Formula : C15H21N3O3S
Chemical Structure : Chemical Structure of Gliclazide

সাধারণ প্রশ্নাবলী

গ্লিক্লাজাইড কী?

গ্লিক্লাজাইড হচ্ছে টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্যকারী একটি মুখে খাওয়ার ঔষধ। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে শরীরকে দুভাবে সাহায্য করে। প্রথমত, এটি অগ্ন্যাশয়কে আরও বেশি ইনসুলিন নিঃসরণে উৎসাহিত করে। দ্বিতীয়ত, এটি আপনার শরীরের বিদ্যমান ইনসুলিন ব্যবহারের সামর্থ্য বৃদ্ধি করে। এভাবেই এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়।

খাবার ব্যতীত গ্লিক্লাজাইড সেবন করলে কী হবে?

গ্লিক্লাজাইড এর ডোজ আপনার খাবারের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আপনি যদি সেবন বেলার আহারটি এড়িয়ে যান, তাহলে ঔষধটিও এড়িয়ে যাওয়া উচিত। অতিরিক্ত কোনো খাবার খেতে হলে, সেদিনের মাত্রা উপযোজন করার বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

গ্লিক্লাজাইড এর একটি ডোজ বাদ পড়লে কী করব?

মিস হয়ে যাওয়া ডোজটি মনে পড়ার সাথে সাথেই খেতে পারেন। তবে যদি পরবর্তী ডোজ নেওয়ার সময় হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে মিস হয়ে যাওয়া ডোজটি এড়িয়ে যান। দুটি ডোজ একসাথে খেয়ে নেওয়া যাবে না।

গ্লিক্লাজাইড এর কার্যকারিতা কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

এই ঔষধের কার্যকারিতা সাধারণত গড়ে ২৪ ঘন্টা স্থায়ী হয়।

গর্ভাবস্থায় গ্লিক্লাজাইড সেবন কি নিরাপদ?

এই ঔষধটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়।

সাধারণ নির্দেশাবলী

  • আপনার ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী গ্লিক্লাজাইড সেবন করুন। এটি কত মাত্রায় এবং কতবার খাবেন সে বিষয়েও নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।
  • ঔষধটি মুখে খেতে হবে সকালে খাবার এর ৩০ মিনিট আগে।
  • আপনার ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী নিয়মিতভাবে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন।
  • হাইপোগ্লাইসিমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া) চিকিৎসার জন্য সবসময় আপনার সাথে মিষ্টি জাতীয় খাবার বা চিনির ক্যান্ডি রাখুন। নিয়মিত খাবার গ্রহণ হাইপোগ্লাইসিমিয়ার ঝুঁকি কমায়।